মহামারি করোনা সংকট
কৃষকদের ৪% সুদে ঋণ দেয়ার নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৪-২৮ ০৮:৪৯:৫৪
৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে ধান, গমসহ সব ধরনের দানাদার শস্য, অর্থকরী ফসল, শাকসবজি ও কন্দাল (আলু,কচু) জাতীয় ফসল আবাদে কৃষকদের ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নভেল করোনাভাইরাসজনিত ক্ষতির হাত থেকে দেশের কৃষকদের সুরক্ষা দিতে প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি এ নিয়ে একটি নীতিমালা জারি করেছে।
এই নীতিমালায় বলা হয়, কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার ভিত্তিতে সরাসরি কৃষকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করবে ব্যাংকগুলো। বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো কৃষকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে সুদ আদায় করতে পারবে। এ স্কিমের মেয়াদ শুরু হবে চলতি বছরের ১ এপ্রিল। শেষ হবে ২০২১ সালের ৩০ জুন। এর আওতায় ব্যাংক থেকে এরই মধ্যে ঋণগ্রহণকারী কৃষকদের পাশাপাশি নতুন ঋণগ্রহীতা কৃষকরাও ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে ঋণ পাবেন। তবে নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কৃষককে প্রচলিত সুদহারে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
কৃষকদের ঋণ বিতরণ ও আদায়ের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়, কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা এবং কর্মসূচিতে উল্লিখিত ধান, গমসহ সব ধরনের দানাদার শস্য, অর্থকরী ফসল, শাকসবজি ও কন্দাল ফসল চাষের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আগের বছরের মতো নিজস্ব তহবিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ হার সুদে ঋণ বিতরণ করবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তাদের প্রকৃত সুদ-ক্ষতি অনুযায়ী ৫ শতাংশ হারে সুদ পুনর্ভরণ সুবিধাপ্রাপ্য হবে।
শস্য ও ফসল চাষের জন্য রেয়াতি সুদে ঋণ বিতরণ এবং আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারীকৃত কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা এবং কর্মসূচিতে উল্লেখিত ঋণ নিয়মাচার এবং অন্যান্য নীতিমালা এক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ, কৃষকপ্রতি ঋণের সর্বোচ্চ সীমা, জামানত, আবেদনপত্র গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণের সময়কাল, ঋণগ্রহীতার যোগ্যতা নিরূপণ, পাস বইয়ের ব্যবহার, ঋণ বিতরণ, ঋণের সদ্ব্যবহার, তদারকি ও আদায় ইত্যাদি যথারীতি প্রযোজ্য হবে। এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদহার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, নভেল করোনাভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগ থেকে দেশের কৃষি খাতকে সুরক্ষা দিতে সম্প্রতি ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ৪ শতাংশ সুদের ওই তহবিল থেকে শস্য ও ফসল উৎপাদনে জড়িত কৃষকরা ঋণ পাবেন না বলে শর্ত ছিল। তবে সদ্য জারীকৃত নীতিমালাটিতে সব ধরনের ফসল চাষীদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন:
এদিকে চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, এর অর্ধেক অর্থের জোগান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ১০ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার পর এ তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে অর্থ সহায়তা নিতে পারবে।
এর আগে বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য সরকার ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধন প্যাকেজের অর্ধেক তথা ১৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার বাংলাদেশ ব্যাংক সিএমএসএমই খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজেরও অর্ধেক অর্থ জোগানের ঘোষণা দিল। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্যই এ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
ঘোষিত সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। এর মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ সাড়ে ৪ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে সিএমএসএমই খাতে বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেক ব্যাংকগুলো ৪ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে নিতে পারবে।
গ্রাহকদের ঋণ দেয়ার পর ব্যাংকগুলো এ তহবিল থেকে অর্থ নেয়ার আবেদন করতে পারবে। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আবেদন কেস টু কেসভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ তহবিলের মেয়াদ ধরা হয়েছে তিন বছর। তবে প্রতিটি ঋণের মেয়াদ এক বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ফেরত দিতে হবে। এতে বিলম্ব হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাব থেকে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদসহ টাকা কেটে নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও বিশেষ এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে।