খুলনায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ১৯, নেগেটিভ ১৮ জনের
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৫-০৩ ১৬:৪১:৫১
জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম লক্ষণ। দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্ত হওয়ার পর এই উপসর্গগুলো মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। অনেকেই এসব উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। ছিলেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। ওই ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিংবা করোনা উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। তারা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন কিনা তা নিশ্চিত হতে মৃত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলে ১৮ জনের নেগেটিভ এসেছে।
খুলনায় সনাক্ত হওয়ার আগেই দাফন হয়েছিল প্রকৌশলী নূর আলম খান ওরফে নুরুজ্জামানের। দাফন করতে গিয়ে তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু না হলেও মোড়েলগঞ্জের দুলাল হাওলাদারের নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত। অথচ তিনি ডায়াবেটিস নিয়ে মোড়েলগঞ্জ থেকে ঢাকা বারডেম হাসপাতালে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানের ডাক্তাররা তাকে চিকিৎসা দেন। সংস্পর্শে আসেন সেবা দেয়া নার্স-কর্মচারীরাও। এ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ঢাকা থেকে মোড়েলগঞ্জ নিয়ে দাফন করা হয়। আর এতোগুলো লোককে ঝুঁকির মধ্যে রেখেই মৃত্যুর পর সনাক্ত হলো করোনা।
এদিকে, করোনার উপসর্গ নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর মৃত্যু হয়েছিল ফুলতলার মিজানুর রহমানের। মৃত্যুর পর তাঁর ও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে। ফলাফল আসার আগেই তাকে বিনা গোসলে দাফন করতে হয়। এলাকাবাসীর তোপের মুখে তার পরিবারের সদস্যরা অনেকটা নাজেহালও হন। কিন্তু দাফনের পরে জানা গেল তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না।
এভাবেই মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ আর পরীক্ষার পর অধিকাংশেরই ফলাফল আসে নেগেটিভ। খুলনায় রোববার পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারী ১৯ জনের মধ্যে ১৮ জনের ফলাফল হয় নেগেটিভ। রোগীদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ ভর্তির সাথে সাথেই নমুনা সংগ্রহ করা হলে হয়তো তাদের সন্দেহ দূরীভূত হতো। তাছাড়া করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তির পর সার্বক্ষণিক চিকিৎসক পাওয়া যায়না বলেও রোগীদের স্বজনদের অভিযোগ রয়েছে। এ ইউনিটেই এ পর্যন্ত ১০জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদের মৃত্যু হয় হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে।
সর্বশেষ শনিবার খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউসুফ আলী খান নামের ৬০ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় করোনা উপসর্গে। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয় মৃত্যুর পর। পাঠানো হয় খুমেক’র পিসিআর ল্যাবে। ফলাফল জানা যাবে রোববার সন্ধ্যায়। এর আগে শুক্রবার বিকেলে খুমেক হাসপাতালের করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ইউনিটে মৃত্যু হয় এক বছরের শিশু ফাতেমার। তার বাড়ি বটিয়াঘাটার খারাবাদ বাইনতলায়। যথাযথ দাফনের পর শনিবার দেখা যায় তার ফলাফল হয় নেগেটিভ।
এভাবেই লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষায় দেখা যায়, আরো ১৬ জনের ফলাফল এসেছে নেগেটিভ। অবশ্য ফলাফল নেগেটিভ হলেও অনেক লাশ দাফনে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় পরিবারের সদস্যদের।
খুলনায় গত ২৮ এপ্রিল পিরোজপুরের লিমা খাতুন, ২৫ এপ্রিল কেসিসির গাড়ি চালক কাজী শরিফুল ইসলাম মুক্তার, আরংঘাটার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি এবং কচুয়ার ১৬ মাস বয়সী ফাতেমার মৃত্যু হয়। এছাড়া ২১ এপ্রিল লবণচরার ফেরদৌসি আরা ও ফুলতলার মিজানুর রহমানের মৃত্যু হলেও তাদের নমুনায় ফলাফল নেগেটিভ আসে। ওইদিন রূপসার রাজাপুরের প্রকৌশলী নুরুজ্জামানের মৃত্যুর পরে জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। পরদিন তার ১৩ বছরের ছেলে মাহিম ও তিন বছরের ছেলে ফাহিমেরও করোনা পজেটিভ হয়।
এর আগে ১৯ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন দু’জন। এরা হলেন পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর মাসুমা বেগম ও ডুমুরিয়ার নোয়াকাটির ইকরামুল মোল্লা। এর মধ্যে ডুমুরিয়ার ইকরামুল মোল্লা নিজ বাড়িতে মারা গেলেও তার নমুনা পরীক্ষা করা হয় খুলনা মেডিকেলে। কিন্তু ফলাফল নেগেটিভ হয়।
১৭ এপ্রিল দু’জনের মৃত্যু হলে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয় খুলনা মেডিকেলে। তাদেরও ফলাফল হয় নেগেটিভ। এরা হলেন নবণচরার মো: আসাদুজ্জামান ও রূপসার কাজদিয়ার শিশুর মিতু।
এছাড়া ১০ এপ্রিল খালিশপুরের রাফাত নামের ছয় মাসের এক শিশুর মৃত্যু হলে তার নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায় ফলাফল নেগেটিভ। ১০ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারী সকলের নমুনা পরীক্ষা করা হয় খুলনা মেডিকেলের পিসিআর ল্যাবে। কিন্তু এর আগে পাঁচ জনের মৃত্যু হলে তাদের মধ্যে দু’জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয় ঢাকাস্থ রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে(আইইডিসিআর)। এরা হলেন মোস্তাহিদুর রহমান রুবেল (২৬ মার্চ) ও সালেহা বেগম(৬ এপ্রিল)। তাদের ফলাফলও হয় নেগেটিভ। আবার ১৯ মার্চ মোংলার বাবুল চৌধুরী ও নড়াইলের রবিউল ইসলাম এবং ২৯ মার্চ নড়াইলের কালিয়ার সুলতান শেখের মৃত্যু হলে তাদের নমুনা পরীক্ষাই করা হয়নি।
এ ব্যাপারে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) এবং করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ইউনিটের মুখপাত্র ডা: শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, অধিকাংশ সময় দেখা গেছে, বিকেলে ভর্তির পর রাতেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যেহেতু বিকেলে নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরদিন ছাড়া পরীক্ষার সুযোগ নেই, সে কারণে ওইদিন আর নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও যেহেতু মৃত্যুর তিন থেকে চার ঘন্টা পর্যন্ত ভাইরাসটি জীবিত থাকে সেহেতু মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ হলেও ক্ষতি নেই।
তবে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসক নেই। মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরাই সেখানে গিয়ে ডিউটি করেন। এজন্য হয়ত সার্বক্ষণিক ডাক্তার পাওয়া যায় না। তবে জরুরি প্রয়োজনে নার্সরা কল করলেই ডাক্তাররা সেখানে গিয়ে হাজির হন।
সানবিডি/এসকেএস