করোনায় ‍অর্থনৈতিক সংকট

ক্ষতি কাটাতে ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৫-০৫ ০৮:৪৫:৫৩


প্রাণঘাতি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাময়িকভাবে বন্ধ হচ্ছে অস্থাবর সম্পদ ক্রয়। এছাড়া লাগাম টানা হবে এসব প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যবহারের ওপরও। এছাড়া পর্ষদ সভাসহ এসব প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক নানা আয়োজনে ব্যয় নিয়ন্ত্রণেরও আদেশ দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জারীকৃত এক নির্দেশনা সূত্রে এসব তথ্য জানা গিয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনাবশ্যক পরিচালন ব্যয় কমানোর আদেশ দিয়ে জারি করা ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ সংকট মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় তারল্য বাড়িয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনাবশ্যক ব্যয় কমাতে অস্থাবর সম্পদ ক্রয়, অফিস স্পেস ভাড়া ও সাজসজ্জা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বলেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এছাড়া গাড়ি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি পর্ষদ সভাসহ বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠান, বার্ষিক সাধারণ সভা, আপ্যায়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সভার জন্য ভেনু ভাড়া না করে নিজস্ব কনফারেন্স রুম ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও নির্বাহীদের অনাবশ্যক বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি কর্মচারীদের ভ্রমণ ও যাতায়াত ভাতা, আপ্যায়ন খরচ, স্টেশনারি ও উন্নয়ন ফান্ডসহ বিভিন্ন খরচে মিতব্যয়ী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, বার্ষিক ক্যালেন্ডার, ডায়েরি মুদ্রণ বা এ-জাতীয় প্রচারণামূলক ব্যয়ে অর্থ বরাদ্দ সীমিত করে আনার নির্দেশনাও দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) পক্ষ থেকে এরই মধ্যে কভিড-১৯-এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্যাকেজ বাস্তবায়নে দ্রুত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি এর প্রস্তুতি গ্রহণ ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার উপায় বের করতে আগামী বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবে এফআইডি।

প্রসঙ্গত, চলমান পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, সেবা ও কৃষি খাত পুনরুদ্ধারে ৯৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর প্রায় পুরোটাই ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নে সম্প্রতি বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

তবে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা। কারণ, এসব ব্যাংকে

তারল্য সংকট নেই। দেশজুড়ে অনেক শাখা বিস্তৃত থাকায় ক্ষুদ্র্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, কৃষি খাতসহ সার্বিক সেবা ও শিল্প খাতের ঋণপ্রত্যাশীরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকেই ঋণ নিতে বেশি আগ্রহী হবেন। তাই এখন থেকেই প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবারের ওই অনলাইন বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।