পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে শ্রমিক অসন্তোষ
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৫-০৮ ০৯:০০:১৪
দেশব্যাপী ক্রমেই ছড়িয়ে পড়া মারণঘাতি নভেল করোনাভাইরাসের কারণে প্রকৌশলী-শ্রমিক, কাঁচামাল ও নির্মাণসামগ্রী সংকটের মধ্যেও চলমান রয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ। সম্প্রতি মজুরি নিয়ে এ প্রকল্পে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বুধবার রাতে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ‘বিক্ষুব্ধ’ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত সাতজন শ্রমিক।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার সীতারামপুরে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কাজের গতি স্বাভাবিক রাখার কথা বলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বাংলাদেশী শ্রমিকদের ‘ওভারটাইম’ করিয়ে নিচ্ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিআরইসি। ওভারটাইম করার জন্য কর্মীদের বাড়তি ৩০০ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, ওভারটাইমের টাকা দেয়া নিয়ে ঠিকাদারের লোকজন টালবাহানা শুরু করে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা। তারা বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেন। এ সময় বিক্ষোভ থামাতে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় নিরাপত্তাকর্মীরা। এতে অন্তত সাতজন শ্রমিককে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার মধ্যরাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রেস নোটে জানানো হয়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে শ্রমিক-নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রিভেন্ট সিকিউরিটি কোম্পানি লিমিটেড (পিএসই) নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আসছিল। মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা গন্ডগোল দেখা দিলে পিএসইর কর্মী ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন বলে ওই প্রেসনোটে জানানো হয়।
শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় বৃহষ্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি জানান, আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মরত কিছু শ্রমিকের মধ্যে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকে এ ঘটনা। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। শুক্রবারের মধ্যেই তারা প্রতিবেদন জমা দেবেন।
সম্প্রতি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পেও। দেশে করোনাভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা কিংবা প্রকল্পটি লকডাউনের দাবি তোলেন শ্রমিকরা। এ দাবিতে গত ৯ ও ১০ এপ্রিল আংশিকভাবে কাজও বন্ধ রাখেন কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা। তাদের দাবি ছিল, লকডাউনের সময় শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন দিতে হবে এবং কোনো কর্মীকে ছাঁটাই করা যাবে না। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ মোতায়েন করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের দাবি আমলে না নিয়ে এখনো চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে নির্মাণকাজ।
ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পেও। প্রকল্পটিতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন প্রায় ১ হাজার ৮০০ ভারতীয় শ্রমিক। তাদের অভিযোগ, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা প্রকল্প এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্বজনদের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারছেন না। এমনকি ঠিকমতো খাবারও পাচ্ছেন না। এসব অভিযোগে গত ৪ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেন ভারতীয় শ্রমিকরা। এর মধ্যে কয়েকশ শ্রমিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা যেকোনো মূল্যে ভারতে ফিরতে চান বলে জানান।
ঘটনাটি সম্পর্কে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপপ্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় শ্রমিকদের মধ্যে একধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। তাই বাড়িতে যাওয়ার দাবিতে কিছু শ্রমিক বাইরে বের হয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
ভারতীয় শ্রমিকরা যখন নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, তখন বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে ‘কাজের টাকা না পাওয়া’র অভিযোগে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। টাকা পাওয়ার জন্য প্রকল্পের দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের ঘুষ চাওয়ারও অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা। ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় চুক্তিতে কাজ করা একাধিক বাংলাদেশী শ্রমিককে প্রকল্প এলাকা থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে।সূত্র-বণিক বার্তা