জবির পরিবহন সমস্যা ও মাশুকদের গল্প

প্রকাশ: ২০১৫-১২-০৫ ১৯:২৮:৩৩


JnU-Bus-5নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। যার মধ্যে অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ ব্যবস্থা। ২১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ১২ কি ১৩টি বাস। বাস গুলোর কাজ হচ্ছে কাক ডাকা ভোরে শিক্ষার্থীদের কাম্পাসে নিয়ে আসা ও শেষ বিকেলে  নিয়ে যাওয়া। মাঝখানে সারাদিন কাম্পাসে অলস অবস্থায় বাসগুলোকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

শুধু সকাল ও বিকেলের ট্রিপে ২১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১২-১৩টি বাস! এমন কথায় পাঠক সমাজের চোখ কপালে উঠতেই পারে। আমি প্রায়ই বলে থাকি, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কান্না করলে চোখ দিয়ে পানি বের হয়না; বের হয় রক্ত”। তাদের রক্ত দেখার কেউ নেই। নিজেকে অবিভাবক শূন্য মনে হয়! মাঝে মাঝে মনে করি  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের “জন্মই যেন আজন্ম পাপ”! কেউ একবারও ভাবে না এতগুলো শিক্ষার্থী কেমন করে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে। অনেক শিক্ষার্থীকে দুপুরে ক্লাস পরীক্ষা শেষ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের জন্য বিকেল পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বসে থাকতে দেখা যায়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় বাসের ২য় কোন ট্রিপ নেই। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু নারায়ণগঞ্জ রুটে সকাল ও বিকেলে মোট ৮ টি ট্রিপ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোকে সারাদিন ট্রিপ না দিয়ে অলসের মত কাম্পাসে ফেলে রাখা কতটুকু যুক্তির মধ্যে পড়ে তা পাঠক সমাজের নিকট প্রশ্ন রইলো।

প্রতিনিয়ত দ্বিগুণের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী বহন করে বাসগুলোকেও অনেকটা হাঁপিয়ে উঠতে দেখা যায়। মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোও পারলে আমাদের পক্ষে প্রতিবাদ করতো! সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর চাপ দেখা যায় বাসগুলোর গেইটে। কেউ শখের বসে গেইটে বাদুড় ঝোলা হয়ে দাঁড়ায় না। একটি বাসের গেইটে যেখানে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়াতে পারে সেখানে ৩০-৩৫ জন  শিক্ষার্থীর দাঁড়িয়ে থাকার পরিবেশ কতটুকু কঠিন তা বাস্থবে না দেখলে বুঝানো অনেকটাই মুশকিল। দু’জনের আসনে ৩ জন এমনকি অনেক সময় বন্ধুর কোলে বসাও নতুন কিছু নয়।

অনেক সময় গেইটে দাঁড়াতে না পেরে শিক্ষার্থীরা বাসের পেছন দিকের বারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকেই   ছিটকে পড়ে যায়। রাজপথে পড়ে থাকে। এরপর ভাই-বন্ধুরা হাসপাতালে  নিয়ে যায়। এইতো কিছুদিন আগে ছোট ভাই নাজমুলকে  বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বাসায় ফেরার সময় পেছন থেকে অন্য একটি লোকাল বাস ধাক্কায় দেয়। আহত অবস্থায় তাকে রাজপথে পড়ে থাকতে দেখলাম।

নাজমুলের ঘটনা পুরনো না হতেই সাভার রুটের বংশী বাস থেকে ছিটকে পরে যায়  বিবিএ (হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থপনা বিভাগ) এর ৯ম ব্যাচের ছোট ভাই মাশুক। বাসে সিট না থাকায় বাধ্য হয়ে গেইটে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পাসে আসছিলো। হঠাৎ অন্য একটি বাসকে পাস কাটানোর সময় বাস থেকে ছিটকে রাস্তায় পরে  মাথায় আঘাত পায় সে। চলে যায়  আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে। জবিতে এমন হাজারো মাশুক আসে,মাশুক যায়। কিন্তু মাশুকদের গল্প শেষ হয় না; সমাধান হয় না জবি শিক্ষার্থীদের পরিবহণ সমস্যার।

মিডিয়ার বরাতে মাশুকদের কিছু গল্প প্রকাশ হলেও অনেক গল্পই  অজানা রয়ে যায়। তখন খুব অসহায় মনে হয়। আমরা কি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী? আমাদের জীবনের কোন দাম নেই? নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর কত বাদুড় ঝোলা হয়ে  বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব? বাসে থাকা অবস্থায় মনে হয় এই বুঝি চাপ না নিতে পেরে বাসটি উল্টে  গেলো। কোন দিন যেন আমি নিজেই বাস থেকে ছিটকে পড়ে মরে যাই। এমন প্রশ্ন অহরহ মনের ভেতর  নাড়া দেয়।

আমরা মাশুকদের গল্পের শেষ চাই। সমাধান চাই  জবির পরিবহণ সমস্যার। বাস্থবতা ও অতীতের অভিজ্ঞতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট আজ আমি অসংখ্য বাস চাইতে রাজি নই । কারণ প্রায় দু’বছর পর সর্বশেষ আন্দোলনে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস আমরা এখনো ভুলিনি। উল্লেখ্য তিনি আমাদের যতগুলো বাস দরকার ততগুলো বাস দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটু স্বদিচ্ছাই পারে জবির এ সমস্যার সমাধান করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোকে ক্যাম্পাসে সারাদিন অলস অবস্থায় না রেখে দুপুরে জবি থেকে প্রতি রুটে কমপক্ষে  ফার্মগেট সমান দূরুত্বে যদি আরেকটি ট্রিপ দেয়া হয় তাহলে পরিবহণ সমস্যা অনেকটাই  কমে যাবে বলে আমি মনে করি। তখন বিকেলের ট্রিপে শিক্ষার্থীদের চাপ অনেকাংশেই কম হবে।  এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ টাকা খরচের প্রয়োজন নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে প্রয়োজন রুট, ট্রিপ ও বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।

সমস্যা সমাধানে মাননীয় ভিসি স্যারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আশা করি স্যার পরিবহণ সমস্যার সমাধান ও মাশুকদের গল্পের ইতি টানতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

লেখকঃ মো.আরিফুল ইসলাম

স্বেচ্ছাসেবক ও শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সানবিডি/ঢাকা/রাআ