মহামারি করোনা সংকট
সাড়ে ৮ হাজার পোশাক শ্রমিক ছাঁটাই
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৫-১১ ০৮:১৯:৫৬
গাজীপুরে অবস্থিত একটি পোশাক কারখানায় গত ১০ এপ্রিল একদিনেই কাজ হারান ৪০৬ জন শ্রমিক। বিজিএমইএর সদস্য কারখানাটি জার্সিসহ নানা ধরনের স্পোর্টসওয়্যার তৈরি ও রফতানি করে। এর আগে ৭ এপ্রিল গাজীপুরেরই আরেকটি পোশাক কারখানায় কাজ হারিয়েছেন ১৭০ জন শ্রমিক।
শুধু গাজীপুরেই নয়,করোনা সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরুর পর থেকেই পোশাকসহ দেশের সব শিল্প এলাকার কারখানাগুলোতেই কম-বেশি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা চলছিল। এ ধারাবাহিকতায় কারখানা মালিকরা এখন পর্যন্ত সাড়ে আট হাজারেরও বেশি শ্রমিক ছাঁটাই করেছেন।
এ বিষয়ে শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন মন্দা মোকাবেলায় শিল্প-কারখানাগুলো ব্যয় সংকোচন পরিকল্পনা নিয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে বাড়ছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা। নভেল করোনাভাইরাসজনিত সংকটে শ্রমিক ছাঁটাই না করার বিষয়ে সরকারের দিকনির্দেশনা থাকলেও ছাঁটাই এরই মধ্যে আট হাজার ছাড়িয়েছে। আইন অনুসরণ করে ‘রিট্রেঞ্চমেন্ট’ বা ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন মালিকরাও।
দেশের শিল্প এলাকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে আশুলিয়া ও গাজীপুরে। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহে কোনো ছাঁটাইয়ের তথ্য না থাকলেও ৫০০ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা আছে নারায়ণগঞ্জে। আশুলিয়ায় মোট ৪৮টি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ সদস্য কারখানা ৩৮টি, বিকেএমইএ সদস্য কারখানা পাঁচটি। অন্যান্য খাতের কারখানা পাঁচটি। সব মিলিয়ে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৩০।
গাজীপুর এলাকার ১০টি কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য কারখানা সাতটি ও অন্যান্য খাতের কারখানা তিনটি। এসব কারখানায় ছাঁটাইকৃত শ্রমিকের সংখ্যা মোট ১ হাজার ৬২৩। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় মোট সাতটি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য কারখানা একটি ও বিকেএমইএ সদস্য কারখানা চারটি। এছাড়া রফতানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ও অন্যান্য খাতের দুটি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছেন ৫০০ জন।
শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, আমাদের তালিকা দেখে আগামীকাল উত্তর দেব। এর আগে এপ্রিলে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটলে তিনি বলেছিলেন, কাজের বয়স এক বছরের নিচে এমন শ্রমিকদের আইনসম্মত ‘রিট্রেঞ্চমেন্ট’ হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রতিটি সদস্যকে এমনটা না করতে অনুরোধ করেছি।
এদিকে খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনের অনুরোধের পাশাপাশি করোনা প্রাদুর্ভাবকালে শ্রমিক ছাঁটাই না করার বিষয়ে নির্দেশনা আছে সরকারেরও। সর্বশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে গতকাল। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ৪ মে প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের আগে মালিকপক্ষ কোনো শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফ ঘোষণা করবেন না। এছাড়া সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬৫ শতাংশ হারে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধের মাধ্যমে সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়।
কিন্তু শ্রমিক ছাঁটাই না করতে সরকারের নির্দেশনা যেমন পরিপালন হয়নি, তেমনি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬৫ শতাংশ হারে মজুরি পরিশোধকালে অনেক কারখানার শ্রমিক তা মানছেন না বলেও শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ৯ মে আশুলিয়া ও গাজীপুরে মোট ৩৫টি কারখানায় শতভাগ মজুরির দাবিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শ্রমিকরা। গতকালও গাজীপুর, আশুলিয়া ও চট্টগ্রাম এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে, যার অধিকাংশই হয়েছে শতভাগ মজুরির দাবিতে।
শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় সব পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাছাই করা হচ্ছে এক বছরের কম সময় ধরে কাজ করছেন এমন শ্রমিকদের। কিছু কারখানায় ভবিষ্যতে ছাঁটাই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেতন পরিশোধ করে শ্রমিকদের পরিচয়পত্র রেখে দেয়া হলেও শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধে পরিচয়পত্র আবার ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবার সাধারণ ছুটি চলাকালীন শ্রমিক ছাঁটাই আইনসম্মত নয় বলেও মালিকরা গণহারে শ্রমিক ছাঁটাই থেকে বিরত আছেন। যাদের আর্থিক সক্ষমতা নাজুক, তারা এখনই শ্রমিক ছাঁটাই করতে চাইছেন। তবে সরকারি সহায়তা কাজে লাগিয়েও তিন মাস শ্রমিক বসিয়ে রাখা মালিকদের পক্ষে কঠিন বলে জানিয়েছেন তারা। বর্তমানে এপ্রিলের বেতন পরিশোধ শুরু হয়েছে। ছয় শিল্প এলাকায় ৭ হাজার ৬০২টি কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করেছে ৪২৯টি।