৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৫-১১ ০৮:৩৯:৫৬
মারণঘাতি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের জন্য স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী জীবন বীমা করপোরেশন স্বাস্থ্যবীমা করার উদ্যোগ নিলেও তাতে রাজি হয়নি অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বীমা সুবিধার বদলে করোনা আক্রান্ত ফ্রন্টলাইনারদের বেতন গ্রেডভেদে নগদ ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মৃতদের পরিবারকে ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা জানিয়ে গত ২৩ এপ্রিল পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ অর্থ সংস্থানের জন্য আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর চলতি অর্থবছরের জন্য এ খাতে ১০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী যে বীমার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে কাজ করছিল জীবন বীমা করপোরেশন। পরে সরকার ফ্রন্টলাইনারদের জন্য বীমা সুবিধার বদলে নগদ ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্তে এলে সাধারণ বীমা করপোরেশন নিজস্ব উদ্যোগে শুধু করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের বীমার আওতায় আনতে সবকিছু চূড়ান্ত করেছে। করপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকেও এটি অনুমোদন পেয়েছে। এর আওতায় কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতরা নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে চিকিৎসক ১০ লাখ এবং নার্স ও টেকনিশিয়ানরা ৫ লাখ টাকা করে বীমা সুবিধা পাবেন। বীমার প্রিমিয়ামের একটি অংশ সাধারণ বীমা করপোরেশন তার করপোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) তহবিল থেকে বহন করবে। বাকিটা সরকার বা স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেরা বহন করবেন। জুনের আগেই এ বীমা চালু হবে। বীমা সুবিধা চালুর আগে কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এ সুবিধার আওতায় পড়বেন না।
সাধারণ বীমা করপোরেশন তাদের বোর্ড সভায় অনুমোদন পাওয়া বীমা চালুর বিষয়টি গত ৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় খুব শিগগিরই এটি অনুমোদন করবে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আমরা একটা প্রডাক্ট তৈরি করেছি। কয়েকটি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের আমাদের সিএসআর ফান্ড থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে এ সেবার আওতায় আনা হবে। বাকিদের এ সেবাটি ক্রয় করতে হবে।
করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা পলিসি চালুর জন্য ইউরোপসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এএক্সএ ফ্রান্স ভিয়ে থেকে রেট অ্যান্ড টার্মসসহ প্রস্তাব পাওয়া যায়। করপোরেশন সেগুলো কিছু সংশোধনের প্রস্তাব করেছে। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি তাদের চূড়ান্ত মতামত জানাবে।
ফ্রান্সের পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবে ডাক্তারদের জন্য ৫ লাখ এবং নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুতে ৩ লাখ টাকার কথা বলা হয়েছে। এক বছর মেয়াদি এ বীমার বার্ষিক প্রিমিয়াম হার বলা হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৮%। বীমা সুবিধা পেতে হলে বয়স সর্বোচ্চ ৬০ বছর হতে হবে। শর্ত হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জন্মতারিখ, ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে মিল রেখে পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট, হাসপাতালে ভর্তির তারিখ ও মৃত্যু সনদ দাখিলের কথা বলা হয়েছে।
সাধারণ বীমা করপোরেশন তাদের শর্তে বেশকিছু সংশোধন এনেছে। সাধারণ বীমা বলেছে, চিকিৎসকদের বীমা সুবিধা হবে ১০ লাখ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ৫ লাখ টাকা। বয়সসীমা হবে ৭০ বছর। ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টের বদলে এনআইডি বা পাসপোর্টের কপি দাখিল করা হবে। বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে হাসপাতালে ভর্তির কাগজ প্রযোজ্য হবে না।
পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই সেবা দিতে হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা অভিযোগ করে আসছিলেন। এছাড়া তারা বিভিন্ন সময়ে পিপিইর সংকটের কথাও জানিয়েছিলেন। চিকিৎসকরা বলছেন, একই পিপিই একাধিক চিকিৎসককে ব্যবহার করতে হচ্ছে। সরবরাহ করা হয়নি এন৯৫ বা সমমানের কোনো মাস্ক। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের মুখে পড়ছেন চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা।