জবির প্রধান ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল
প্রকাশ: ২০১৫-১২-০৬ ১৮:৩৮:১৯
বাস থেকে পড়ে আহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত প্রক্টরের বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে মানববন্ধন ও জবির প্রধান ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে প্রক্টরের বক্তব্য প্রত্যাহার এবং প্রথম আলো প্রতিনিধিকে অপসারণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে এ বিক্ষোভ করেন কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী। বিক্ষোভ শেষে জবি ভিসি বরাবর একটি স্বারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ভিসির সভাকক্ষে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন জবি ট্রেজারার।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ২৪ নভেম্বর সাভার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে বাস থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাশুক খান। ৪ ডিসেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অসুস্থ মিশুক। এ বিষয়ে ৫ ডিসেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে প্রক্টরের বরাত দিয়ে বলা হয়, মিশুক হৃদরোগে মারা গেছেন। প্রক্টরের এ বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে রোববার বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহীদ মিনারের সামনে প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা প্রথম আলোর জবি প্রতিনিধিকে অপসারনের দাবি জানান। দুপুর ১১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা জবির প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে জবি প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, তিনি বলেছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহা: আলী নূরের কাছ থেকে তথ্য যাচাই করার জন্য। তিনি সঠিক তথ্য জানতেননা। কিন্তু ওই প্রতিবেদক তথ্য যাচাই না করেই প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রতিবাদ লিপি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
মানববন্ধনে জবি ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এসএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম আলো পত্রিকায় বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশের জন্য পত্রিকার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা হবে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী সাবাব বলেন, বাস থেকে পড়ে মিশুক খান আহত হওয়ার পর জবি প্রক্টর তার কোন খোঁজখবর নেননি। এছাড়া মাশুক হৃদরোগে মারা গেছেন বলে প্রথম আলো পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন। তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে দু:খ প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া, শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ভুয়া খবর প্রকাশ করার জন্য প্রথম আলো প্রতিনিধিকে অপসারন করতে হবে।
এদিকে বিক্ষোভ শেষে দুপুর ২টার দিকে ১০ দফা দাবি নিয়ে একটি স্বারকলিপি জবি ভিসি বরাবর প্রদান করেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান অনুপস্থিত থাকায় ভিসি সভা কক্ষে বিক্ষোভকারীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন জবি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো: সেলিম ভূঁইয়া। আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো, জবি প্রক্টরের মনগড়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে দু:খ প্রকাশ করতে হবে, প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকে অপসারন করতে হবে, পরিবহনের বাস সংখ্যা বাড়াতে হবে, নিহত মাশুকের স্মৃতি রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, বাসের রুট বৃদ্ধি করতে হবে, মাশুকের নামে নতুন বাস দিতে হবে, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে মাশুকের নামে সেমিনার করতে হবে, এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে হবে এবং মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত ঔষুধের ব্যবস্থা করতে হবে।
এসময় জবি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো: সেলিম ভূঁইয়া বলেন, প্রক্টরের এমন বক্তব্য দেয়া উচিত হয়নি। তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। প্রক্টরের পক্ষ থেকে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চান। তার বিরুদ্ধেও প্রথম আলো প্রতিনিধি একাধিক মিথ্যা খবর প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি। এছাড়া, ভিসির সাথে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন ট্রেজারার। আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহা: আলী নূর, সহ সভাপতি ড. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।