সিডর আক্রান্তদের সহায়তায় হাজার কোটি টাকা দানকারী সেই ব্যক্তি!!

আপডেট: ২০১৫-১২-০৮ ১০:৩১:২০


1449457833বাংলাদেশে সিডর আক্রান্তদের সহায়তায় ১৩ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৪৬ কোটি টাকা) দান করেছিলেন সৌদি এক নাগরিক।

নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এই দান করেছিলেন। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এই দান করা হলেও রাজা আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর তার নাম প্রথমবারের মতো জানান ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-আইডিবির প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলী।

আগামী মধ্য জানুয়ারিতে রাজা আবদুল্লাহর ছেলে প্রিন্স তুর্কি বিন আবদুল্লাহ ও আইডিবির প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এলে তখন আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর সামনে ওই ১৩ কোটি ডলারের দাতার নাম ঘোষণা করা হবে।

সূত্র জানায়, টেলিভিশন ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সিডরে আক্রান্তদের দুর্দশা ও ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দেখে মর্মাহত হন সৌদি আরবের তখনকার রাজা আবদুল্লাহ। তিনি আক্রান্তদের সহায়তার জন্য আইডিবির প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলীকে জানান, সিডর আক্রান্তদের সহায়তার জন্য ১৩ কোটি ডলার দান করতে চান তিনি। তবে একটিমাত্র শর্ত জুড়ে দিয়ে বাদশা বলেন, কে এই অর্থ দান করেছে, তা গোপন রাখতে হবে। কোনোমতেই তার নাম বলা যাবে না। নাম-পরিচয় গোপন রাখার আশ্বাস দেন আইডিবি প্রধান। পরদিনই বাংলাদেশের জন্য পুরো ১৩ কোটি ডলার সৌদি রাজা পৌঁছে দেন আইডিবির কাছে। তিনি ব্যক্তিগত অর্থ-সম্পদ থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেন বাংলাদেশকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত জানুয়ারি পর্যন্ত এই বিপুল অর্থ দানকারীর নাম শুধু একজনই জানতেন। তিনি আইডিবির প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলী। রাজার অনুরোধ রাখতে গিয়ে কারও কাছে প্রকাশ করেননি তিনি। তবে গত জানুয়ারি মাসে সৌদি রাজা আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পর আইডিবি প্রেসিডেন্ট প্রথমবারের মতো রাজার ভাই ও সন্তানদের কাছে বিষয়টি খোলাসা করে বলেন, বাংলাদেশে সিডর আক্রান্তদের ১৩ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিটি ছিলেন তাদেরই রাজা। সেই অর্থে বাংলাদেশে স্কুল-কাম-শেল্টার হোম নির্মাণ হচ্ছে।

আরবি ভাষায় ‘ফায়েল খায়ের’ (ভালো কাজের পরিচয় গোপন রেখে সহায়তা করা) দাতা পরিচয়ে সরকারকে ওই অর্থ দিচ্ছে আইডিবি। দানের ওই ১৩ কোটি ডলারের মধ্যে ১১ কোটি ডলার দিয়ে উপকূলীয় এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১৭৩টি স্কুল-কাম-আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে ৩৪টি চালু হয়েছে। ২৭টি নির্মাণ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদারকিতে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম কনস্ট্রাকশন ও নাভানাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এগুলো নির্মাণ করছে।

সরকারের চাহিদা অনুযায়ী, নির্মাণ ব্যয় মেটাতে দানের সেই অর্থ থেকে টাকা দিচ্ছে আইডিবি। বাকি দুই কোটি ডলার দিয়ে সিডর আক্রান্ত কৃষক ও জেলে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কৃষি উপকরণ সরবরাহে বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা এখনো চলছে। আইডিবির ঢাকা অফিস ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আইডিবির প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে বাবার দানের কথা শুনে নির্মাণ শেষ হওয়া ২৭টি স্কুল-কাম-আশ্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রিন্স তুর্কি বিন আবদুল্লাহ।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে তার এই আগ্রহের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেন আইডিবি প্রেসিডেন্ট। ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তারা। তবে সময় কম বলে ইআরডির তরফ থেকে সফরটি মাসখানেক পেছানোর অনুরোধ করে আইডিবিকে একটি চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে আগামী মধ্য জানুয়ারিতে প্রিন্স তুর্কি বিন আবদুল্লাহ ও আইডিবি প্রেসিডেন্ট আহমেদ মোহাম্মদ আলীকে বাংলাদেশে এসে ২৭টি স্কুল-কাম-আশ্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

সানবিডি/ঢাকা/রাআ