গ্রিসে লিমনসহ ৩ জনকে হত্যা,শরীয়তপুরে প্রধান আসামী সাইদুর গ্রেফতার
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২০-০৬-২৬ ১৯:৫৯:৪৪
গ্রিসে গাড়ির ব্যাক ডালার ভেতর আটকে রেখে তিন বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় মামলা করা হয়েছে। দুই মানবপাচারকারীকে অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বিকেলে মামলাটি করেন গ্রিসে নিহত আসিফ হোসেন লিমনের মা ফাহিমা আক্তার।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মাদারীপুর সদর উপজেলার বল্লবদী গ্রামের আব্দুর রশিদ ব্যাপারীর ছেলে মো. সাইদুর রহমান ব্যাপারীকে (৪৫)।
শুক্রবার (২৬ জুন) ভোরে পুলিশ সাইদুর রহমানকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে। আর দ্বিতীয় আসামি ওই গ্রামের মৃত ধোনাব মাদবরের ছেলে কোব্বাছ মাদবর (৩৫)। কোব্বাছ বর্তমানে গ্রিসে রয়েছেন। গ্রিসের ওই ঘটনায় ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার আরো দুইজন নিহত হয়েছেন।
মামলার বাদী নিহত লিমনের মা ফাহিমা আক্তারের দাবি, দালাল সাইদুর রহমান ব্যাপারী প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তার ছেলে লিমনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন। পরে দালাল সাইদুর রহমান ও কোব্বাছ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার ছেলেকে বিভিন্ন কৌশলে বিমানে বৈধ উপায়ে গ্রিসে নেয়ার আশ্বাস দেন। তার স্বামী তোফাজ্জল হাকিদার ষড়যন্ত্র বুঝতে না পেরে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ছেলেকে গ্রিসে পাঠাতে রাজি হন। তারা তোফাজ্জল হাকিদারের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা দাবি করেন। প্রথমে তিনি সাইদুর রহমানের কাছে নগদ ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দেন এবং পরে শরীয়তপুর সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন। এই কাজে সাইদুর রহমানের সহযোগী ছিলেন কোব্বাছসহ কয়েকজন।
পুলিশ জানায়, মামলায় মানবপাচারের উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে আটক করে মুক্তিপণ দাবি এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়, সাইদুর রহমানের মাধ্যমে নিহত বাংলাদেশিরা তুরস্ক থেকে চোরাই পথে মাইক্রোবাসে করে গ্রিসে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় ছিলেন। সাইদুর রহমানের প্ররোচণায় তারা বিপদের মুখে পড়েন।
নিহত লিমনের বাবা তোফাজ্জল হাকিদার বলেন, আমার ছেলের হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তাদের ফাঁসি দেয়া হোক। এভাবে প্রতারণার স্বীকার হয়ে আর কারও মা-বাবার বুক যেন খালি না হয়।
জাজিরা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এমএ মজিদ বকুল বলেন, তুরস্ক থেকে গ্রিস যাওয়ার পথে একটি গাড়ির ব্যাক ডালার ভিতর নিহত লিমনসহ বাংলাদেশি তিনজনকে নির্যাতন করে গাদাগাদি করে ঢুকানো হয়। পরে শ্বাস বন্ধ হয়ে তিনজনই মারা যান। গ্রিসের আলেকজান্ডা পলি নামক স্থানের ফাঁকা সড়কের পাশে মরদেহগুলো ফেলে রেখে চলে যান চালক। পরে গ্রিসে অবস্থিত দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিহত তিনজনের বিষয়ে স্বজনদের জানান। পরে দূতাবাসের মাধ্যমে মরদেহ দেশে এনে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আসিফ হোসেন লিমনের মা বাদী হয়ে দুইজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।