পানিতে ডুবে মারা গেলে শহীদ! মুফতী মাহমুদ হাসান
:: প্রকাশ: ২০২০-০৮-০৭ ১৮:০২:৪৬
মৃত্যু এক বাস্তব সত্য। অস্বীকার করা সম্ভব নয়। একদিন না একদিন সবার মৃত্যু বরন করতেই হবে।তবে সুন্দর ও স্বাভাবিক মৃত্যুর প্রত্যাশা সব মানুষের। এর পরও কষ্টকর ও দুর্ঘটনাকবলিত মৃত্যুরও মুখোমুখি হয় কোনো কোনো মানুষ। মুমিন বিশ্বাস করে মানুষের মৃত্যু কিভাবে হবে তা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। তাই দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে ইসলামে তাকে হেয় করার সুযোগ নেই; বরং আল্লাহর দরবারে বিশ্বাসী ব্যক্তির কষ্টকর মৃত্যুর বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।
দুর্ঘটনা কবলিত মৃত্যুর মধ্যে একটি হচ্ছে পানিতে ডুবে মরা। সম্প্রতি পানিতে ডুবে মরার সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তির প্রতি রয়েছে সুসংবাদ।হাদিসে তাদেরকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বিশ্বনবীর ঘোষণা “পানিতে ডুবে মৃত্যু হলে ব্যক্তি শহীদ”:
যে মুসলিম পানিতে ডুবে মারা যাবে তাকে হাদীস শরীফে শহীদ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
عن جَابِرَ بْنَ عَتِيكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : (مَا تَعُدُّونَ الشَّهَادَةَ ؟ قَالُوا : الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ تَعَالَى . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الشَّهَادَةُ سَبْعٌ سِوَى الْقَتْلِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ : الْمَطْعُونُ شَهِيدٌ ، وَالْغَرِقُ شَهِيدٌ ، وَصَاحِبُ ذَاتِ الْجَنْبِ شَهِيدٌ ، وَالْمَبْطُونُ شَهِيدٌ ، وَصَاحِبُ الْحَرِيقِ شَهِيدٌ ، وَالَّذِي يَمُوتُ تَحْتَ الْهَدْمِ شَهِيدٌ ، وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهِيدٌ)
অর্থ: জাবের ইবনে আতীক – রাদিআল্লাহু আনহু – বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের নিকট শাহাদাৎ কি ? তারা বলল : আল্লাহর রাস্তায় মারা যাওয়া। তিনি বললেন : আল্লাহর রাস্তায় মারা যাওয়া ছাড়াও সাত প্রকার শাহাদাৎ রয়েছে :
১.প্লেগ বা মহামারিতে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
২.পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৩.ফুসফুসে রোগাক্রান্ত মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৪.পেটের রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৫. আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৬. ধ্বংস স্তুপের নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৭.আর যে নারী পেটে বাচ্চা নিয়ে মারা যায় সেও শহীদ।আহমদ :(২৩৮০৪), আবূ দাউদ : (৩১১১), নাসায়ী : (১৮৪৬), সহিহ আবূ দাউদে আল-বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
আরো একটি হাদীসে এসেছে
فقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الشُّهَدَاءُ خَمْسَةٌ : الْمَطْعُونُ ، وَالْمَبْطُونُ ، وَالْغَرِيقُ ، وَصَاحِبُ الْهَدْمِ ، وَالشَّهِيدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ(رواه البخاري (2829) ومسلم ( 1914)
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন পাঁচ ব্যক্তি শহীদ:
১-মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।
২.পেটের রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ।
৩.পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ।
৪.যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায় সেও শহীদ।
৫. যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ।
(বুখারী শরীফ ২৮২৯.মুসলিম শরীফ ১৯১৪)
শহীদের প্রাপ্তি ও মর্যাদা
একজন শহীদ আল্লাহর কাছ থেকে ৬টি পুরস্কার পাবেন আর সেগুলো হলো:
لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ: يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ، وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الجَنَّةِ، وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَيَأْمَنُ مِنَ الفَزَعِ الأَكْبَرِ، وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الوَقَارِ، اليَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنَ الحُورِ العِينِ، وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ
শহীদ আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে বড়বড় ছয়টি পুরস্কার পাবে।
১. তাকে তৎক্ষণাৎ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তাকে তার জান্নাতী নিবাস দেখনো হবে।
২. কবরের আযাব মাফ করে দেয়া হবে ।
৩. হাশরের ময়দানে যখন ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই সন্ত্রস্ত ও পেরেশান থাকবে, তখন আল্লাহ পাক তাকে সেই পেরেশানি ও বিভীষিকা থেকে মুক্ত রাখবেন।
৪. সেদিন তার মাথায় এমন একটি সম্মাননা মুকুট পরানো হবে, যার একেকটি হীরা ও মুক্তা দুনিয়া ও তার সব কিছু থেকে দামী হবে।
৫. স্ত্রী হিসাবে তাকে বাহাত্তরজন হুর দান করা হবে।
৬. তার নিকটজনদের মধ্যে হতে সত্তরজনের ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।( সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১৬৬৩)
পানিতে ডুবে মারা গেলে শহীদের মর্যাদা পাওয়া যায়। “তবে একটাই শর্ত। তাকে মুসলিম হতে হবে। মুশরিক হলে হবে না। চলার পথে ভ্রমণটা কোন গুনার কাজের হবে না।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে ঈমানের সাথে এই দুনিয়া ছেড়ে আল্লাহর সম্মুখে হাজির হওয়ার তাওফীক দিক।যে কয়েকজন উলামায়ে কেরামগণ পানিতে ডুবে শাহাদত বরণ করেছেন। সবার মাগফিরাত এবং পরিবারের সবরে জামিল এখতিয়ার করার তাওফিক দিক।
মুফতী মাহমুদ হাসান।
*দারুল হাদীস (এম.এ,ইসলামিক স্টাডিস)
জামিয়াতুল আবরার বসুন্ধরা ঢাকা।
*আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ(অনার্স) ঢাকা।
*দারুল ইফতা (ইসলামিক আইন ও গবেষণা বিভাগ) ঢাকা।