সোনার দাম বাড়ার কারণ
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৮-০৯ ১৪:২৪:২৮
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে সব ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ। জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, নতুন করে সোনার গহনা বানাতে দোকানমুখী হচ্ছেন না ক্রেতারা। অর্থাৎ সোনার চাহিদা আগের চেয়ে কয়েকগুণ কমেছে। অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম হলো য়ে কোন জিনিসের চাহিদা কম থাকলে সেই জিনিসের দাম কমে। কিন্তু সোনার ক্ষেত্রে হচ্ছে তার ঠিক উল্টো। সোনার দাম বাড়তে বাড়তে অনেকেরই নাগালের বাইরে চলে গেছে।
বিশ্ববাজারে ডলারের মতো সোনাও একটি কারেন্সি বা মুদ্রা। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা ও ডলার দুটোই কিনে রাখে এবং ব্যবসা করে। বর্তমানে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোতে ডলারের দাম পড়ে গেছে। ফলে চীনসহ বিভিন্ন দেশে অনেকেই ডলার বিক্রি করে সোনা কিনতে শুরু করেছে। এতে সোনার চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামও বাড়ছে।
এ বিষয়ে জানা গেছে, করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম প্রায় ৫শ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহেই প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে আড়াইশ ডলার করে। যে কারণে দেশের বাজারে সোনার চাহিদা কমলেও দাম বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, দেশের সোনা যাতে দেশের বাইরে না যায় সে জন্যই দাম বাড়ানো হয়। তার মতে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্যই সোনার দাম বাড়ানো হয়। চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স করার জন্য এটা করতে হয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পরও দেশের বাজারে দাম যদি না বাড়ানো হয়, তাহলে ভারতসহ দুনিয়ার সব দেশের মানুষ বাংলাদেশ থেকে অল্প দামে সোনা কেনা শুরু করবে। বাংলাদেশ হবে স্মাগলিংয়ের অভয়ারণ্য।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা আরও বলেন, করোনার কারণে দেশে সোনার চাহিদা কমে গেলেও সোনার দাম বাড়ছে। এর প্রধান কারণ বিশ্ববাজারে অস্থিরতা। তিনি উল্লেখ করেন, সোনা এক ধরনের কারেন্সি। আন্তর্জাতিক নিয়ম হলো ডলার অথবা সোনা নির্দিষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ থাকলেই কেবল টাকা প্রিন্ট করা যায়। করোনার কারণে পৃথিবীজুড়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে সব দেশকে টাকা প্রিন্ট করতে হচ্ছে। যে কারণে পৃথিবীর সব দেশের রিজার্ভ বাড়াতে হচ্ছে। এতে সোনার চাহিদাও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছে করলেই টাকা প্রিন্ট করতে পারে না। টাকা প্রিন্ট করতে হলে হয়তো ডলারের রিজার্ভ থাকতে হবে অথবা গোল্ডের রিজার্ভ থাকতে হয়।
তিনি মনে করেন, আমেরিকা ও চীনের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে এই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আমেরিকার ওপর এখন কেউ আস্থা পাচ্ছে না। আমেরিকার নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সোনার দাম বাড়তেই থাকবে।
জানা গেছে, বৈশ্বিক এ মহামারির মধ্যে চারবার স্বর্ণের দাম বাড়ালো বাজুস। এর আগে ২৩ জুলাই স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করেছিল বাজুস। যা ২৪ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। তার আগে গত ২৩ জুন এবং তারও আগে ২৮ মে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করেছিল স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি। যদিও মরণঘাতী করোনার শুরুর দিকে (১৮ মার্চ) সোনার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাজুস। পরদিন ১৯ মার্চ থেকে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা।
স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮-এর বিধান অনুসরণ করে এ পর্যন্ত ১১ কেজি সোনা আমদানি করা হয়েছে। গত ৩০ জুন দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণবার আমদানি করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড।
সানবিডি/এনজে