হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল

:: প্রকাশ: ২০২০-০৮-১৬ ২০:০৭:০৭


ভূমিকা : আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী- রসুল প্রেরন করেন। সর্ব প্রথম নবী ছিলেন হযরত আদম (আঃ) আর সর্ব শেষ নবী ও রসুল ছিলেন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। রসুল (সঃ) এর মাধ্যমে নবী বা রসুল গনের আগমন ধারা শেষ বা বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং তিনিই সর্বশেষ নবী বা খাতামুন ন্যবিয়্যিন। আল্লাহ বলেন-“মুহাম্মাদ (সঃ) তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নয়,(সে) আল্লাহর রসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞাতা। (সুরা আহযাব – ৪০)

সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রসুল: হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) নবুয়তের সর্বশেষ নবী বা রসুল ছিলেন। পৃথিবীতে যত নবী রসুল আগমন করেছেন তাঁরা ছিলেন কোন জাতি বা গোত্রের নবী বা রসুল। কিন্তু রসুল (সঃ) ছিলেন সমস্ত মানব জাতির জন্য এবং কেয়ামত পর্যন্ত রসুল । তাই সমস্ত নবী বা রসুল গণ তাঁর কওম বা জাতিকে উদ্যেশ্য করে নসীহত করেছেন। যেমন, নূহ (আঃ) বলেন, “হে আমার সম্প্রদায়; আমিতো তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ক কারী (সুরা নূহ- ২)। কিন্তু রসুল (সঃ) সারা বিশ্বের সকল স্থানের কেয়ামতপর্যন্ত সকল মানুষের নবী বা রসুল। আল্লাহ বলেন “বল: হে মানবমন্ডলী, আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহর রসুল রূপে প্রেরিত হয়েছি, যিনি আকাশ ও ভূমন্ডলের সার্বভৌম একচ্ছত্র মালিক। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই (সুরা আরাফ -১৫৮)

রসুল (সঃ) বিশ্বজগতের সর্বকালের নবী। কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমন করবে সকলেরই নবী তিনিই। যার নিষ্ঠা,আদর্শ ও আনিত কিতাব আল কুরআন সকলকে অনুসরন করতে হবে। তিনি রহমতের নবী। মানব জাতির জন্য তিনি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুগ্রহ স্বরূপ আমাদের প্রিয় নবী সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তিঁনি যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী তা বিশ্বাস করা বা ইহার উপর ঈমান আনা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহ বলেন- “ আমিতো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি” (সুরা আম্বিয়া- ১০৭)।

খতমে নবুয়তের অর্থ ও এতে ঈমান আনার গুরুত্ব: রসুল (সঃ) ছিলেন সর্বশেষ নবী বা রসুল। তাঁর মাধ্যমে দ্বীনের পূর্নতা পায়। দ্বীনের পূর্নতা ঘোষনা আল্লাহ কোরানের মাধ্যমে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন- “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তেমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলাম কে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনিত করলাম” (সুরা মায়েদা-৩)।

রসুল (সঃ) নবী বা রসুল গণের ধারায় সর্বশেষ আগমন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তাঁকে খাতামুন ন্যবিয়্যিন তথা সর্বশেষ নবী বলে অভিহিত করেছেন। খাতামু অর্থ শেষ বা সমাপ্তি। আর নবুয়াত হলো নবী গণের দ্বায়িত্ব সুতরাং খতমে নবুয়াতের অর্থ নবুয়তের সমাপ্তি। যার মাধ্যমে নবুয়াতের ধারার সমাপ্তি ঘটে তিনি হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন বা সর্বশেষ নবী। আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী বা রসুল প্রেরন করেছেন। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর মাধ্যমে নবী রসুল গনের আগমনের ধারা শেষ বা বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং তিঁনিই সর্বশেষ নবী বা খাতামুন ন্যবিয়্যিন।

খাতামুন ন্যবিয়্যিন সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষনা: আল্লাহ বলেন- “মুহাম্মাদ (সঃ) তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নয়,বরং সে আল্লাহর রসুল এবং শেষ নবী। (সুরা আহযাব – ৪০)

খাতামুন শব্দের অন্য অর্থ সিলমোহর। কোন কিছুতে সিলমোহর যখন অঙ্কিত করা হয় তখন তা পূর্ণ হয়ে যায়। সীল মোহর লাগানোর পর কোন কিছু প্রবেশ করানো যায় না বা প্রয়োজন হয় না। নবুয়তের সীল মোহর হলো নবুয়তের পরিসমাপ্তির ঘোষনা নবুয়তের দায়িত্ব পরিসমাপ্তির ঘোষনা। অর্থাৎ নতুন করে কোন ব্যক্তি নবী হতে পারবেনা। এটাই হলো খাতামুন নবুয়তের মূল কথা।

আমাদের প্রিয়নবী (সঃ) হলেন খাতামুন ন্যবিয়্যিন। তিনি সর্বশেষ নবী তাঁর পর আর কোন নবী বা রসুল নেই। আর কোরআন হলো মুমিনের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত চূড়ান্ত হেকমত ও হেদায়াত এর পরে আর কোন কিতাব নাই।

খাতামুন ন্যবিয়্যিন সম্পর্কে রসুল (সঃ) এর ঘোষনা: রসুল (সঃ) এর পরে আজ পর্যন্ত কোন নবী আসে নাই। কিয়ামত পর্যন্ত আসবেও না। তাঁর পরির্বতে যারা নবুয়ত দাবী করেছেন তারা সবাই ভন্ড, মিথ্যাবাদি, প্রতারক এবং ইসলামের দুশমন। কেননা রসুল (সঃ) বলেছেন -আমি শেষ নবী আমার পরে কোন নবী নাই (মুসলিম)। আবুকর (রা) এর আমলেও ভন্ড নবীর আবির্ভাব হয়- তা তিনি কঠোর হস্তে দমন ও র্নিমূল করেন।অন্য হাদিসে মহনবী (সঃ) বলেছেন-অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে। তারা প্রত্যেকেই নবী দাবী করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী আমার পর আর কোন নবী আসবে না (আবুদাউদ)।

ইহুদী ও খ্রীষ্টানগণ মনে করে মুসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ) শেষ নবী। তাই তারা মুহাম্মাদ (সঃ) আনীত ধর্ম ইসলাম মেনে নিচ্ছেনা। অথচ মুহাম্মাদ (সঃ) ই শেষ নবী। এ কথা যেমন কোরআনে বলা হয়েছে তেমনিভাবে তাওরাত এবং ইঞ্জিলেও বলা হয়েছে।

তাওরাত ও ইঞ্জিলের আলোকে রসুল (সঃ) এর নবুয়াতির ঘোষনা: রসুল (সঃ) সম্পর্কে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে অনেক অলোচনা হয়েছে। স্বয়ং কোরানে ইরশাদ হচ্ছে, “যারা অনুসরন করবে উম্মী রসুলের যাঁর কথা তারা লিপিবদ্ধ পেয়ে থাকে তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে” (সুরা আরাফ- ১৫৭) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- “স্মরণ কর, যখন মরিয়াম তণয় ঈসা বলেছিল, হে বনী ইসরাইল, নিশ্চই আমি তোমাদের প্রতি প্রেরিত রসুল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি উহার সমর্থক এমন

রসুলের আগমনের সুসংবাদ বাহক যিনি আমার পরে আগমন করবেন, তাঁর নাম হবে আহম্মদ” (সুরা সফ-৬)

তাওরাত ও ইঞ্জিলে যেহেতু শেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ ছিল। কিন্তু তারা আশা করে ছিল যে, বনী ইসরাইল থেকেই শেষ নবীর আগমন ঘটবে। যখন তা হলোনা বনী ইসমাইল থেকে শেষ নবীর আগমন ঘটল তখন তারা জিদের বশে জেনে শুনে শেষ নবীকে অস্বীকার করল। এই কথা কুরআনে বর্নিত আছে। আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদেরকে (ইয়াহুদ/ খ্রিষ্টান) কিতাব দিয়েছি তারা তাঁকে (শেষ নবীকে) চিনে যেমন ভাবে চিনে আপন সন্তানদেরকে এবং নিশ্চয়ই তাদের এক দল জ্ঞাতসারে সত্যকে গোপন করছে ”(সুরা বাকারা ১৪৬)।

রসুল (সঃ) এর বাল্যকালের ঘটনা : (সিরিয়া সফর)

মহনবী (সঃ) এর বয়স তখন বিশ বছর। ব্যবসার উদ্দেশ্যে আবু তালেব সিরিয়া সফরে মনস্থ করেন। সফরে দুঃখ কষ্ট ও মরুভূমি পাড়ি দিয়ার ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে আবু তালেব ভাতিজাকে সঙ্গে না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মহানবী (সঃ)এর এই সময়ে চাচার সাথী হওয়ার বায়না ধরেন। ফলে আবু তালেব রাজী হন। রসুল (সঃ) সহ কাফেলা সিরিয়ার দক্ষিনাংশে অবস্থিত বুশরায় পৌছায়। এই সফরে এক খ্রিষ্টান পাদ্রী বাহীরা মহানবীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। খ্রিষ্টান ধর্মীয় গ্রন্থে শেষ নবীর যে সব নিদর্শন উল্লেখ করা হয়েছে বাহীরা মহানবীর মধ্যে সে সব দেখতে পান এবং মহানবীকে সিরিয়ায় না নেওয়ার অনুরোধ করেন যেহেতু সেখানকার ঈহুদীরা চিনতে পারলে ক্ষতি করতে পারে।

হযরত খাদীজা ও ওয়ারাকা ইবনে নওফেল: ওয়ারাকা ইবনে নওফেল খৃষ্ট ধর্ম গ্রহন করে ছিলেন। তিনি ইঞ্জিল কিতাব আরবিতে অনুবাদ করেন। রসুল (সঃ) এর উপর প্রথম ওয়াহি সুরা আলাকের অংশ নাজিল হলে বিষয়টা নিয়ে খাদিজা (রাঃ) ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের নিকট যান। নওফেল সব শুনে বলেন- “যে মহাসত্তার নিকট আমার জীবন,আমি তাঁর শপথ করে বলছি, হে খাদিজা তুমি যা বলছ যদি এভাবেই এসে থাকেন, তা হলে হযরত মুফ (আঃ) এর নিকট যিনি এসেছিলেন তিনি সেই ফিরিস্তা, তিনি মহানবী উম্মতের নবী। তাঁকে বলে দাও,তিনি যেন বিপদে আপদে ঘাবড়ে না যান। তিনি যেন অটল থাকেন।”

উপসংহার: হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) একটি নাম। মানুষের ওষ্ঠদয় প্রতিদিন অনেক বার এ পবিত্র নামের আস্বাদ গ্রহণ করে। কারন তিনি আল্লার পক্ষ থেকে সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী ও রসুল। যে রসুল (সঃ) এর উপর একবার দরুদ পেশ করে- আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত নাজিল করেন। রসুল (সঃ) এর অনুসরন ও অনুকরন-ই-মুমিন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া আবশ্যক।

গ্রন্থ পঞ্জি :
১। কোরানুল কারীম ।
২। মহানবীর জীবন চরিত্র। ডঃ মুহাম্মাদ হোসাইন হায়কল। অনুবাদ : মাওলানা : আবদুল আউয়াল।দ্বিতীয় সংস্করণ, জুন, ২০০১। প্রকাশক ঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
মোঃ দীন ইসলাম মিঞা এফ সি এ,
এম কম, এম এ (ইসলামিক স্টাডিজ)
প্রিন্সিপাল- দারুল মোকাম মাদ্রাসা ঢাকা।
চেয়ারম্যান-ইসলাম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন অব বেঙ্গল।
এমিগো ১৪ স্কয়ার (লেভেল-১২), ৫৯/সি-৬১/সি, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর ঢাকা-১২০৭।
ইমেইল ঃ islamfca@gmail.com