পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: ২০১৫-১২-১২ ১৫:২৬:২৫


Padma Setuপদ্মা বহুমুখী সেতুর নদী শাসনের কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার সকালে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে নদীশাসনের কাজ উদ্বোধন করেন তিনি।

এরপর দুপুর ১২টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় মূল সেতুর নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে মাওয়া পার থেকে নদীর ১ কিলোমিটার ভিতরে ৭ নম্বর পিলারের কাজ উদ্বোধন তিনি।

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে সরকার। ইতোমধ্যে এই সেতুর প্রায় ২৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জাজিরা ও মাওয়া সাইটে অ্যাপ্রোচ সড়কের ৬০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে মোট দেশজ উৎপাদন ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে। সেই সঙ্গে প্রতি বছর ০ দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়।

সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ২৮,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। এই সেতুর নির্মাণ কাজ ৫ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। মূল সেতু, নদী শাসন, দুটি লিংক রোড এবং অবকাঠামো (সার্ভিস এলাকা) নির্মাণ। সেতুতে মোট ৪২টি পিলার থাকবে। পিলারের ওপর ৪১টি স্টিলের স্প্যান বসানো হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক এম. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুর মূল নির্মাণ কাজ হচ্ছে- পাইলিং ও নদী শাসন। মূল সেতু নির্মাণে চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নদী শাসনের জন্য গত ৪ মাস ধরে মাটি পরীক্ষা ও খনন কাজ চলছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকি করবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিজয়ের মাসে পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা জাতির জন্য আরেকটি বিজয় নিশ্চিত করবেন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছে বাঙ্গালি জাতি। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা বহুমুখী সেতু উন্মুক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছেন।

মন্ত্রী বলেন, গাড়ি ও রেল চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুতে দুটি স্তর থাকবে। উপরের স্তর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে, এটি কনক্রিটে তৈরি হবে এবং নিচ দিয়ে রেল চলবে এটির কাঠামো হবে স্টিলের। ডিজাইন এবং পদ্মা সেতুর উভয় অংশে ঢাকা থেকে যশোর ১৬০ কিলোমিটার রেলওয়ে নির্মাণের ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সকালে জাজিরা পয়েন্টে সুধী সমাবেশে এবং বিকেলে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার উত্তর মেদিনি মন্ডলের খানবাড়ী প্রাঙ্গণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার।

মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার বিল্পব বিজয় তালুকদার জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে মাওয়ায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরো এলাকার নিরাপত্তায় ১৬০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সেতু দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলার প্রায় ৬ কোটি লোকের জীবন ও জীবিকায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের লোকদের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতুর ফলে ওই ১৯ জেলার জনগণের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তির লাঘব হবে। তাদের ভ্রমণ সময় বাঁচবে ২-৩ ঘণ্টা।

১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ই পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তা শুরু হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে পুনরায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে আসে বিশ্ব ব্যাংক।

কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে থাকে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দরপত্র মূল্যায়ন করে পাঁচ দরদাতাকে বাছাই করে তা বিশ্ব ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য পাঠানো হলেও সংস্থাটি তা ঝুলিয়ে রাখে।

এরপর পদ্মা সেতুতে ‘সম্ভাব্য’ দুর্নীতির’ অভিযোগ আনে বিশ্ব ব্যাংক। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়।

শেষ পর্যন্ত নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের জুনে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানিকে মূল সেতু নির্মাণের কাজ এবং সিনো হাইড্রো করপোরেশনকে নদী শাসনের কাজ দেওয়া হয়।

চুক্তি অনুযায়ী ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় ৪৮ মাসের মধ্যে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির কাজ শেষ করার কথা। সেই হিসাবে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের মে মাসে।