ফাইনালে মাশরাফির কুমিল্লা
প্রকাশ: ২০১৫-১২-১২ ১৮:১৬:৫৮
টুর্নামেন্টের শুরুতে বোলার থেকে অলরাউন্ডারের তকমা লাগিয়ে জয়ের পথটা দেখিয়েছিলেন কাপ্তান মাশরাফিই। যাকে বিপিএল শুরুর আগে শুনতে হয়েছিল, ‘তিনি তো অলরাউন্ডার না’। তার দেখানো পথে আবু হায়দার রনি আলো জ্বেলে গেছেন। কোয়ালিফায়ারে আসার আগে যার সংগ্রহ ১৭ উইকেট! এরপর ফাইনাল নির্ধারক ম্যাচে পঞ্চম ওভারে বিধ্বংসী দুই ডেলিভারি। সাকিবকে ছাড়িয়ে এককভাবে শীর্ষে সর্বাধিক উইকেট শিকারির তালিকায়।
আজ সিমন্স তার যে ইয়র্কারে মাটিতে পড়ে গেলেন, তা বছরের সেরা ইয়ার্কার কিনা তা কে জানে! সেই শুরু। এরপর থেকে-থেকে উইকেট হারাতে থাকে সাকিবের রংপুর। এক ওভার করিয়ে রনিকে বসিয়ে রাখেন মাশরাফি। উদ্দেশ্য পরিষ্কার- যদি ম্যাচ জমে যায়, তাহলে শেষ ভরসা হিসেবে ডাকবেন নবাগত নায়ককে। ম্যাচ না জমলেও মাশরাফি ফের রনিকে স্মরণ করেন ১৫তম ওভারে। সেবার এসেও এক উইকেট। এরপর আবার আসলেন ১৭তম ওভারে। শেষ উইকেট নিয়ে (নিজের চতুর্থ) খেলা দিলেন শেষ করে! সর্বসাকুল্যে রংপুর করতে পারল ৯১।
ফাইনালে কুমিল্লাকে আনতে সার্বিক নায়ক রনি-মাশরাফি হলেও আজকের নায়ক কিন্তু ওই আজহার জাইদি। যিনি শেষ দিকে ব্যাটে নেমে ১৫ বলে ৪০ রান করে দলীয় স্কোর দেড়শ পার করেন। এরপর বল হাতে চার উইকেট।
এদিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পেরেরার বিধ্বংসী বোলিং উপেক্ষা করে লড়াইয়ের স্কোর গড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ১৬৩। কুমিল্লার মিডল অর্ডার আর লোয়ার অর্ডার ছেঁটে ফেলার কাজটি করেন পেরেরা। চার ওভার হাত ঘুরিয়ে ২৬ রান খরচায় ফেরান পাঁচ ব্যাটসম্যানকে। শুরুতে বেশ সাবধানী ব্যাটিং করেন ইমরুল-লিটন।
উইকেট না হারানোর প্রবণতা ছিল স্পষ্টত। কিন্তু তার ভেতর রানের চাকা সচল রাখেন দুজনে। ৭৯ রানের জুটি গড়ে ‘ক্ষণিকের ভুলে’ বিদায় নেন লিটন (২৮)। এগারতম ওভারের শেষ বলে সাকলাইন সজীবকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন জাতীয় দলের ডানহাতি ওপেনার। ইমরুল ঠিকই অর্ধশতক তুলে নেন।
এক উইকেট পড়ে যাওয়ার পর রানের গতি বাড়াতে মাঠে আসেন ‘অলরাউন্ডার’ মাশরাফি বিন মর্তুজা (১)। কিন্তু আজ সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি ভিক্টোরিয়ান্স অধিনায়ক। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে রুম করে পেরেরাকে উড়িয়ে মারতে যেয়ে শর্ট মিড উইকেটের আকাশে বল তুলে দেন। আকাশচুম্বী বলের ওপর চোখ স্থির রেখে দারুণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
এরপর রাসেলকে নিয়ে স্কোর বড় করার দিকে মন দেন ইমরুল। সাহসী কিছু শটও খেলেন। কিন্তু ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে পেরেরার স্লোয়ার পড়তে ব্যর্থ হন। বোলারের হাতেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তার আগে ৪৮ বলে ৬৭ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন। এরপর একে এক চারজনকে সাজঘর দেখান ওই পেরেরা।
রাসেল (৩) আর শেহজাদকে (০) পরপর দু্ই বলে ভড়কে দেন। ১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে রাসেলের আরেকটি স্লোয়ারে একটু দেরি করে ব্যাট চালান রাসেল। বলে চলে যায় থার্ডম্যানে দাঁড়ানো সজীবের হাতে। পরের বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন শেহজাদ। আর ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে অলককে নিজের পঞ্চম শিকার বানান। অফসাইডের ঝোলানো বলে প্রলুব্ধ হন অলক। যতটা উঁচু করে মারা দরকার ছিল, ততটা পারেননি। আর তাতেই ডিপ কভারে আল-আমিনের সহজ ক্যাচে পরিণত হন।
শেষ দিকে আবু হায়দার রনিকে নিয়ে ছোট্ট একটা ঝড় তুলে আজহার জাইদি দলীয় স্কোর দেড়শ পার করেন। জাইদি ১৫ বল খেলে ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন।
ফাইনালে ওঠার জন্য সাকিবরা আরেকট সুযোগ পাবেন। এলিমিনেটর ম্যাচের বিজয়ী দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে তাদের। এলিমিনেটর ম্যাচে সন্ধ্যায় মুখোমুখি হবে বরিশাল-ঢাকা।