যুগ এসেছে বিকল্প বিনিয়োগের
:: আপডেট: ২০২০-০৯-০৯ ০৯:১৯:৩৬
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০১৫ সালের জুনে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট রুল বা বিকল্প বিনিয়োগ আইন ২০১৫ প্রকাশ করে। বিকল্প বিনিয়োগ বলতে কী বোঝায়, কারা এ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক, ট্রাস্টি এবং বিনিয়োগকারী হতে পারবে এ আইনে তা বিশদ বলা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন। সুতরাং এর সহজতর ব্যাখ্যা অর্থবাহী হবে।
বিকল্প বিনিয়োগ হচ্ছে ব্যাংক বা শেয়ারবাজারের পাশাপাশি একটি বিনিয়োগ ব্যবস্থা। এটি সারাবিশ্বেই জনপ্রিয় ও আকারেও ব্যাপক। গত শতাব্দীর সুদনির্ভর ব্যবস্থা এ শতাব্দীতে বেশ সম্মান হারিয়েছে। যুগ এসেছে বিকল্প বিনিয়োগের।
বাংলাদেশে নতুন এ বিকল্প বিনিয়োগকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, যা সব উদ্যোগ বিশেষ করে উদ্যমী তরুণদের উদ্যোগ- যারা মেধা এবং নতুন ধারণা ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে চাইছেন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড, তাদের জন্য। এই উদ্যোগী তরুণদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসা শুরু করার জন্য যথেষ্ট অর্থ থাকে না। প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থাতেও তারা অংশগ্রহণ করতে পারে না। কেননা তাদের বন্ধক দেওয়ার মতো কোনো সম্পত্তি নেই। তা ছাড়া শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মতো পথও তাদের জন্য সুদূর পরাহত। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তাদের বড় সাহায্য করবে।
দ্বিতীয় প্রকারের বিকল্প বিনিয়োগ হচ্ছে প্রাইভেট ইক্যুইটি। যেসব প্রকল্প দু-তিন বছর ধরে চলছে, যাদের ভবিষ্যৎ বেশ আশাব্যঞ্জক অথচ এ মুহূর্তে তাদের ব্যাংক ব্যবস্থা বা শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংস্থানের সুযোগ নেই। অথচ সামনে তিন-চার বছরের মধ্যে কোম্পানির আয় বাড়ার সম্ভাবনা রাখে। এ প্রকল্পগুলো শিগগির শেয়ারবাজারের মাধ্যমে আইপিওতে আসতে পারবে। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে এরা উপকৃত হবেন। ইমপ্যাক্ট ফান্ডের আওতায় তহবিল ব্যবস্থাপক সেসব প্রকল্পে অর্থায়ন করবে, যেখানে সামাজিক ও পরিবেশের উন্নয়নের সমাধান আছে।
বাংলাদেশে বিকল্প বিনিয়োগ ব্যবস্থা একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। গত কয়েক বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানকার বিনিয়োগ বাজারের দিকে নজর রাখছেন। বিশেষ করে প্রাইভেট ফ্রন্টিয়ার ফাইভ বা নেক্সট ইলেভেন- এ দুই তালিকায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি খুবই উল্লেখযোগ্য ছিল; কিন্তু প্রায় এক দশক পর আমরা স্থান হয়ত ধরে রাখতে পারিনি। আমাদের অভিজ্ঞতায় বলে, সম্ভাবনা অপার হলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দুটি প্রশ্নে আকর্ষণীয় উত্তর পান না। প্রথমত, বাংলাদেশকে অনেক ছোট অর্থনীতির দেশ ভাবা হয়। কিন্তু সবার মনে রাখা জরুরি, ভৌগোলিক আকারে বাংলাদেশের আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটের সমান হলেও জনসংখ্যা গোটা আমেরিকার অর্ধেক। আবার এ জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এই বিপুল জনসাধারণের সবাই কাজ করতে আগ্রহী। সুতরাং জনগণই শক্তির প্রকৃত উৎস হতে পারে।
বাংলাদেশের জিডিপি ২০৩ বিলিয়ন ডলারের মতো। উন্নত বিশ্বের মাপে এটি ছোট অর্থনীতি হতে পারে; কিন্তু এ কথা ভুললে চলবে না যে, এক দশকের বেশি সময় ধরে আমাদের উন্নয়নের হার ৬ শতাংশ। সামনের কয়েক বছরের মধ্যে এ হার ১০ শতাংশে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে তাদের টাকা কীভাবে ফেরত পাওয়া যাবে। গত কয়েক বছরে বিনিয়োগ ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে সরকার অনেক নীতি নিয়েছে। এক সময় বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ছিল। সে অবস্থা এখন আর নেই।
বিকল্প বিনিয়োগের আকার শেয়ারবাজারের থেকে অনেক বড় হওয়ায় সম্ভাবনা রাখে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩০০-এরও কম। অথচ লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা ৩৯ হাজার। এদের একটি বড় অংশ প্রাইভেট ইক্যুইটি পাওয়ার যোগ্য হতে পারে। আমাদের ৪২ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন জিডিপির মাত্র ১৬ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে আমাদের শেয়ারবাজার একটি অগভীর বাজার। এর বাইরে যে কোম্পানিগুলো আছে সেগুলোর আকার-আয়তন এবং উন্নয়নের হার মোটেই খারাপ নয়। মূলত ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পগুলোই আমাদের অর্থনীতিকে ৭ শতাংশ হারে এগিয়ে নিয়ে চলেছে এবং বিকল্প বিনিয়োগ এদের আরও শক্তিশালী করবে।
বিকল্প বিনিয়োগকারীদের উৎস দেশের ভেতর থেকে হতে পারে। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংগত ব্যবসায়িক কারণেই বিকল্প বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য শুধু নয়, স্বল্প মেয়াদেও বিকল্প বিনিয়োগ সুন্দর আয়ের উৎস হতে পারে।
লেখক: ওয়ালি-উল মারুফ মতিন, প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মসলিন ক্যাপিটাল