দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে চালু, দুর্ঘটনার আশঙ্কা
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৮-২৭ ১১:৫২:২৩
রাজধানী ঢাকার পোস্তাগোলা থেকে শুরু হয়েছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। দীর্ঘ ৫৫ কিলোমিটার পেরিয়ে শেষ হয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। মাঝখানে পদ্মাসেতু। সম্প্রতি গাড়ি চলাচলের জন্য সড়কটি খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হওয়ার পর পরই ধরা পড়েছে ত্রুটি। একটু পরপরই যাত্রী ছাউনি এবং ওভারহেড দেওয়া হয়েছে, যা কোনো এক্সপ্রেসওয়েতেই থাকে না। কিন্তু এই ত্রুটি সংশোধনে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নেই কোনো উদ্যোগ। বরং এখনও চলছে রোড মার্কিং, ওভারহেড বসানো ও ঘষামাজার কাজ। এমন অবস্থায় সড়কটি চালু করে দেওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যে কোন এক্সপ্রেসওয়ে করার মূল উদ্দেশ্য থাকে, কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বাধাহীনভাবে দ্রুত গতিতে যান চলাচল করবে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়েতে একটু পর পরই প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে। কিছুদূর পর পর রাস্তার উপরই বসানো হয়েছে যাত্রী ছাউনি। এছাড়া রয়েছে ওভার হেড। সেতুটি চালু হলে সড়ক পথের জন্য টোল আদায়ও শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সওজ কর্মকর্তারা।
বিশ্বের কোনো দেশে এরকম এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রী ছাউনি দেখা যায় না। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশ। এগুলো দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে জানিয়ে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ও সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘মূল সড়কের ঠিক পাশে এরকম যাত্রী ছাউনি দেওয়ার ফলে একের পর এক বাস এসে থামবে। এতে মূল সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। তছাড়া একরম যাত্রী ছাউনি মূল সড়কের পাশে আরেকটি লেন করে সেখানে বসাতে হয়। কিছুদূর পর থেকে লেনটি আলাদা করতে হয়, যা এই সড়কে করা হয়নি। এতে ত্রুটি রয়েই গেছে।’
সম্প্রতি সড়কটিতে ওভারহেড স্থাপন করতে দেখা যাচ্ছে। তবে এই ওভারহেড যে উচ্চাতায় বসানো হচ্ছে সেটি সড়কের নির্ধারিত মান অনুযায়ী নয়। এ নিয়ে সওজসংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী জানান, ভবিষ্যতের বিষয়টি মাথায় নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের ওভারহেড আরও উচ্চতায় স্থাপন করা দরকার ছিল। কারণ এখনই পদ্মাসেতুসহ বড় বড় প্রকল্পের যন্ত্রপাতি বহনকারী গাড়ি এই ওভারহেড অতিক্রম করতে পারবে না। আর ভবিষ্যতেও নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
এ ব্যাপারে এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান জানান, প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বাবুবাজারের দিকে সড়কটির যে অংশ গেছে সেটির কাজ এখনও বাকি। মূল সড়কে গাছের রোড মার্কিং ও রঙের কাজ চলছে। করোনার কারণে কাজ থেমেছিল। তবে ডিসেম্বরে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২৫ জেলা যুক্ত হয়ে রাজধানীর সঙ্গে সবচেয়ে দ্রুত গতির সড়কের সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটার বলে জানান সবুজ উদ্দিন খান। সড়কের কিছু জায়গায় কাজ চলমান থাকায় সেখানে ৬০ কিলোমিটার গতি রাখা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী কাজল শাহরিয়ার বলেন, ‘পদ্মাসেতু চালুর দিন থেকে সমন্বিতভাবে টোল আদায় করা হবে এক্সপ্রেসওয়ের। পদ্মাসেতু চালুর ঠিক আগে টোল আদায়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পদ্মাসেতুর এপার-ওপার যোগ করে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চারলেনের এক্সপ্রেসওয়ে এটি। সঙ্গে দুই পাশে পৃথক সার্ভিস লেন করা হয়েছে। এই ৫৫ কিলোমিটার শুরু হয়েছে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে। এরপর মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর হয়ে ফরিদপুর গিয়ে শেষ হয়েছে। মাঝখানে ১২ কিলোমিটার পদ্মাসেতুর এপার ওপার সংযোগ সড়ক আর সাড়ে ছয় কিলোমিটার পদ্মাসেতু।
জানা গেছে, ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে বাধাহীনভাবে যান চলাচলের জন্য ৬টি ফ্লাইওভার ছাড়াও ৩১টি সেতু নির্মাণ কর হয়েছে। রয়েছে ১৯টি আন্ডারপাস। সড়কের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন অংশ ভাঙ্গামোড়ের ক্লোভালিফ। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর ওপরসহ চারটি বড় সেতু রয়েছে এক্সপ্রেসওয়েতে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের মে মাসে এটি চালু করে দেওয়ার কথা থাকলেও সেনাবাহিনী নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। এক বছর সময় সীমা বাড়িয়ে এটি এ বছর চালু করে দেওয়া হলো। এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে এটি দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়কপথ।
সানবিডি/এনজে