নিলামে করোনার প্রভাব

চায়ের বিক্রি কমলো ৫০০ কোটি টাকা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-০৫ ০৮:০৪:০৪


দেশের চায়ের ইতিহাসে গত ২০১৮-১৯ নিলাম বর্ষে রেকর্ড ২ হাজার ৭৮ কোটি টাকার চা বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু পরের নিলাম বর্ষে করোনার প্রভাবে এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে বিক্রি। সমাপ্ত ২০১৯-২০ নিলাম বর্ষে চা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার। মূলত নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে চায়ের চাহিদা কমে যাওয়া এবং দুটি নিলাম স্থগিত হওয়ার কারণে বিক্রিতে এমন প্রভাব পড়েছে।

সর্বশেষ ২০১৯-২০ বর্ষের চূড়ান্ত চা নিলাম প্রতিবেদনে দেখা গেছে,সে সময় ৪৫টি নিলামে সর্বমোট ৮ কোটি ৮৮ লাখ ১১ হাজার ২৬৫ কেজি চা বিক্রি হয়, যার মূল্য (শুল্কবিহীন) ছিল ১ হাজার ৫৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৭৫১ টাকা। যদিও ২০১৮-১৯ নিলাম বর্ষে এর চেয়ে কম চা বিক্রি করেই বাগানগুলো আয় করেছিল ২ হাজার ৭৮ কোটি ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭০৯ টাকা। অর্থাৎ বিগত এক নিলাম বর্ষের চেয়ে চা বিক্রি কম হয়েছে ৫০৩ কোটি ৮৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫৮ টাকা। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চায়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাগান থেকে নিলামে পাঠানো সত্ত্বেও তুলনামূলক কম দাম পেয়েছে বাগানগুলো। এ কারণে আগের বছরের চেয়ে বেশি চা বিক্রি হলেও রেকর্ড পরিমাণ কম অর্থাৎ প্রায় ৫০০ কোটি টাকারও বেশি আয় কমেছে বাগানগুলোর।

এ ব্যাপারে চা খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের বাগানগুলো উৎপাদিত চা প্রথমে প্রক্রিয়াজাত করে নিলামে পাঠয়। সেখানে বিক্রির পর ক্রেতারা ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১ শতাংশ এআইটি পরিশোধ করে চা সংগ্রহ করেন। এছাড়া বাগান মালিকদের কাছ থেকে চা বোর্ড কেজিপ্রতি দামের ওপর ১ শতাংশ আদায় করে। ভ্যাট ও বিভিন্ন কর পরিশোধের মাধ্যমে গুদাম থেকে সংগ্রহ করে নিলামে দর পান ক্রেতারা। এ হিসেবে নিলামে বিক্রি হওয়া চায়ের ওপর আরো ১৬ শতাংশ ভ্যালু যুক্ত হয়। এরপর প্রক্রিয়াকরণ, মোড়কজাত করে বিপণন করে কোম্পানিগুলো। দেশের শীর্ষ চা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সিংহভাগ ক্রেতাই স্ট্রিট চা বিক্রেতা। কিন্তু করোনাকালীন সাধারণ ছুটির কারণে দেশে স্ট্রিট চা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। এ কারণে ২০১৯-২০ নিলাম বর্ষের শেষ দিকের নিলামগুলোতে চা বিক্রি রেকর্ড পরিমাণ কমে যায়। তাছাড়া ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হলেও বর্ধিত দুটি নিলাম (৪৬ ও ৪৭) বাতিল হওয়ায় নিলামে চা বিক্রি থেকে আয় কমে যায় বাগান মালিকদের।

চায়ের বাগান মালিক ও ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ সাড়ে ৯ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এ কারণে বাড়তি চায়ের চাপে নিলামে চায়ের দামও ছিল কম। তার ওপর করোনাকালে চাহিদা কমে যাওয়া, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় চায়ের ওপর সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে। শেষ দিকের নিলামে চায়ের গুণগত মান কম থাকলেও কম কামে বেশি চা বিক্রি হয়। কিন্তু গত নিলাম বর্ষের শেষে চা বিপণন না হওয়ায় নিলামের বার্ষিক চা বিক্রিতে এর প্রভাব পড়েছে।

দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চাহিদার কারণে চায়ের ভালো দাম পাওয়া যায়। আমদানীকৃত চায়ের সরবরাহ কমে গেলে নিলামে চায়ের দাম বাড়ে। কয়েক বছর ধরে দেশে চা আমদানি কার্যত শূন্যে নেমে যাওয়ায় নিলামে চায়ের ভালো দাম পাচ্ছিল উৎপাদকরা। সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে স্ট্রিট চায়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাগান মালিকরা ভালো মানের চা উৎপাদন সত্ত্বেও দাম কম পাচ্ছেন। এ কারণেই সর্বশেষ নিলাম বছরের চেয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কম আয় হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ আরো দীর্ঘায়িত হলে চলমান ২০২০-২১ নিলাম মৌসুমেও চা বিক্রিতে দেশের ১৬৭টি বাগানের আয় আরো কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

এ ব্য‍াপারে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, এপ্রিল থেকেই নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বেশকিছু নিলামে চা বিক্রি হয়নি। আবার যেসব চা বিক্রি হয়েছে, সেগুলোর দামও ছিল অস্বাভাবিক কম। নিলাম বর্ষের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৪৬ ও ৪৭তম নিলাম বাতিল করা হয়েছে সাধারণ ছুটির কারণে। ফলে প্রতি বছরের মতো বাগানগুলো চা বিক্রি করে যে পরিমাণ আয় করত তা পারেনি। অনেক বাগান চা নিলামের জন্য পাঠিয়ে ক্রেতা সংকট ও চাহিদা কম থাকায় রেকর্ড পরিমাণ কম দামে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে বাগানগুলো গত কয়েক বছরের তুলনায় চা বিক্রি করে কম দাম পেয়েছে। যদিও বিগত সময়ে দেশের ১৬৭টি চা বাগান রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন করেছিল। উৎপাদন সত্ত্বেও চায়ের মূল্য কম পাওয়ায় চা বাগানগুলো আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সানবিডি/এনজে