রপ্তানির নতুন সম্ভাবনায় বাইসাইকেল
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৯-০৯ ০৯:০৩:০৫
মহামারি করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববাজারে বেড়েছে দেশের বাইসাইকেল রপ্তানি।চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বিশ্ববাজারে বাইসাইকেল রপ্তানি থেকে আয় এক কোটি ৮৭ লাখ ডলার বা প্রায় ১৫৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে)। পণ্যটির রপ্তানিকারকরা জানান, গত দুই মাসে করোনা শুরুর পরের সময় থেকে ক্রয়াদেশ বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। যদিও কাঁচামাল আমদানির ধীরগতির কারণে যথাসময়ে পণ্য রপ্তানিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।
তারা জানান, করোনার কারণে কাঁচামাল আমদানিতে ধীরগতি রপ্তানিমুখী কারখানার উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করেছে। দেশের বাইরে থেকে কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। সেগুলো এ মুহূর্তে আনা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে চাইলেও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। তার পরও চেষ্টা আছে স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর। আর এই কারণে বাইসাইকেল রপ্তানিতে লিড টাইম (পণ্য জাহাজীকরণের সময়) তিন মাস লাগত, এখন তা বেড়ে হয়েছে ছয় মাস।
এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আগস্ট মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের বাইসাইকেলে রপ্তানি আগের বছরের আগস্টের চেয়ে বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে এক কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয় হয় এক কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর চলতি অর্থবছরের আগস্টে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ডলার। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় বেড়েছে ১৩.০৬ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাইসাইকেল রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে আট কোটি ২৮ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরে বাইসাইকেল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ডলার।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা জানান, দেশের বাইসাইকেলের বিশ্ববাজার বাড়ছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে বিপুল চাহিদা আছে। তাঁরা বলেন, স্থানীয় বাজারের ৭০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। অথচ আমদানি নিরুৎসাহিত করা গেলে পুরো চাহিদাই স্থানীয় উদ্যোক্তারা পূরণ করতে পারেন। এ জন্য অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানান তাঁরা।
শ্রমঘন এই শিল্পে বিপুল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, সস্তা শ্রমিক ও প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। ৩০ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ আসে চীন, কোরিয়া তাইওয়ান থেকে। সাশ্রয়ী হওয়ার ফলে দেশের বাইসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোতে। বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বাইসাইকেল উৎপাদন করে।
হবিগঞ্জে প্রাণ-আরএফএলের বাইসাইকেল প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। যেখানে এখন বছরে প্রায় পাঁচ লাখ পিস উৎপাদন হয়।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাইসাইকেল রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে কানাডা, ডেনমার্ক, বেলজিয়ামসহ মোট ১০টি দেশে বছরে অন্তত দেড় লাখ পিস বাইসাইকেল রপ্তানি করে প্রাণ-আরএফএল। বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর ক্রয়াদেশ আরো বাড়তে শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে বাইসাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। কার্যাদেশ পাওয়া যাচ্ছে। করোনা শুরুর পর থেকে বর্তমানে ৩০ শতাংশ বেশি চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া বাইসাইকেলের স্থানীয় ১২০০ কোটি টাকার বাজারেও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩০ শতাংশের বেশি অবদান আছে। লিড টাইম কমিয়ে আনা গেলে রপ্তানি আয় আরো বাড়বে বলে আমাদের প্রত্যাশা। এ ছাড়া সরকার নীতি সহায়তার মাধ্যমে সাইকেল আমদানি নিরুৎসাহিত করলে স্থানীয় বাজারেও দেশি পণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ করা সম্ভব। এর ফলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে একই সঙ্গে নতুন নতুন কর্মসংস্থানও হবে।’
মেঘনা গ্রুপে তিনটি প্রতিষ্ঠান বাইসাইকেল রপ্তানি করে ইউরোপে। সব মিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বাইসাইকেল রপ্তানি করে আট কোটি ২০ লাখ ডলারের। রপ্তানির মাসওয়ারি হিসাব বলছে, বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ শুরুর পর থেকে এপ্রিল-মে মাসে রপ্তানি ৫৭ শতাংশ কমে যায় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে।
করোনা সংক্রমণ কমে এলে রপ্তানি আবারও বাড়তে শুরু করে। ২০১৯ সালের এপ্রিল-মে মাসে আয় হয়েছিল এক কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ২০২০ সালের একই সময়ে আয় হয় ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার।