বিদেশে রফতানি হচ্ছে রিসাইকেল করা প্লাস্টিক
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-১০ ০৮:০২:৩৩
বিভিন্ন রকম প্লাস্টিকের বর্জ্য রিসাইকেলের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে প্লাস্টিক কুচি।স্থানীয় বিভিন্ন কারখানায় এসব সরবরাহ করার পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। যশোর অঞ্চলে এখন প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের এ ব্যবসার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এতে একদিকে যেমন প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে পরিবেশকে, তেমনি স্থানীয় পর্যায়েও তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
ফারদিন প্লাস্টিক অ্যান্ড গ্লাস হাউজ প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের সঙ্গে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান । স্থানীয় বিভিন্ন কারখানায় এখানে উৎপাদিত রিসাইকেলড প্লাস্টিকের কুচি সরবরাহের পাশাপাশি রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি টাকায়। আশরাফুল ইসলাম বিপ্লব ও তার স্ত্রী সুমাইয়া খাতুনের গড়ে তোলা ফারদিন প্লাস্টিক অ্যান্ড গ্লাস হাউজ নামের এ কারখানার কল্যাণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে যশোর অঞ্চলের পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের।
যশোর শহরের শংকরপুরে গড়ে তোলা এ কারখানায় স্থানীয় বিভিন্ন ভাগাড় থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হচ্ছে। কারখানার স্বত্বাধিকারী আশরাফুল হাসান বিপ্লব জানান, ভাঙাড়ির দোকানের স্বল্প পুঁজির আয় দিয়ে তিনি ও তার স্ত্রী কারখানাটি গড়ে তোলেন। পরে তারা স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণও নেন। বর্তমানে এ কারখানাকে কেন্দ্র করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের। প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়িয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকায়। সহজ শর্তে মূলধন পেলে নতুন একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন রয়েছে তাদের।
ফারদিন প্লাস্টিক অ্যান্ড গ্লাস হাউজের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানার আঙিনাজুড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য। কর্মীরা প্লাস্টিকের বোতল বাছাই ও পরিষ্কারের পর তা টুকরো টুকরো করছেন মেশিনে। আরেকটি যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক মিশ্রিত পানি দিয়ে সে টুকরো ধোয়া হচ্ছে। পরে অন্য একটি যন্ত্রের মধ্যে শুকানো হচ্ছে এসব ভেজা টুকরো।
লাভজনক হওয়ায় যশোর অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের মধ্যে এখন প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিং ব্যবসার জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যার প্রমাণ মেলে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্লাস্টিক কুচি রফতানির পরিসংখ্যানে। বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, গত অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ হাজার ৯৩৪ টন প্লাস্টিকের পুরনো বোতল কুচি ভারতে রফতানি হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রফতানির পাশাপাশি চট্টগ্রাম নৌবন্দর দিয়ে এসব প্লাস্টিক কুচি রফতানি হচ্ছে তুরস্ক, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও কোরিয়ায়।
এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক বোতল থেকে কুচি বানিয়ে বিদেশে রফতানির এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এসব উদ্যোগকে আরো কাজে লাগাতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে একদিকে যেমন মানুষের কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও বাড়বে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্যা বলেন, প্লাস্টিক বোতল এমনিতে পরিবেশের জন্য হুমকি। সেটি মেশিনে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে প্লাস্টিক কুচি তৈরি হচ্ছে। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ছে। এ উদ্যোগ কেন্দ্রীয়ভাবে বড় পরিসরে নেয়া প্রয়োজন। তাহলে প্লাস্টিকে আর পরিবেশ নষ্ট হবে না।