বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরামর্শ

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-১৫ ০৮:২৭:৪৩


কোন ধরণের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে অনিদির্ষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। সোমবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালক অভিৎ জাধব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশের বাজারে কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম আরেক দফা বেড়েছে।

এদিন রাজধানীর খুচরা বাজারে সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫-১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা।

আর পাইকারি বাজারে আমদানি করা ৩৫ টাকার পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে ভারতের বিকল্প হিসেবে আটটি দেশের বাজারের সন্ধান করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বিকল্প এই দেশগুলো হচ্ছে- মিয়ানমার (বার্মা), আফগানিস্তান, মিসর, তুরস্ক, চীন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডস।

ভারতের মালদা কাস্টমসের যুগ্ম সচিব হিলি স্থলবন্দরে প্রথমে একটি মেইলের মাধ্যমে জানায়, নীতি পরিবর্তনের কারণে ভারতের মালদা কাস্টমস থেকে পেঁয়াজ রফতানি একদিনের জন্য বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে।

এ ছাড়া পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সোমবার সকাল থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে ভারত।

বন্দর দিয়ে সকালে ৫০ টন পেঁয়াজ দেশে ঢোকার পর সব কটি বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় দেশটির পেঁয়াজ রফতানিকারকদের সংগঠন।

ফলে বেনাপোলের ওপারের পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে পেঁয়াজভর্তি প্রায় ১৫০টি ট্রাক। পেট্রাপোল রফতানিকারক সমিতি সূত্র বলছে, প্রতি টন ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে না ভারত।

সর্বশেষ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়।

ট্যারিফ কমিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। সাধারণত স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করা হয়।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। এর মধ্যে ২২-২৫ শতাংশ সংগ্রহকালীন এবং সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে স্থানীয় উৎপাদিত পেঁয়াজ থেকে বাজারে মোট সরবরাহ করা হয় ১৯ লাখ ১৭ হাজার টন।

এ ছাড়া ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার টন।

যা ২০১৯ সালে ছিল ৬ লাখ ৭৪ হাজার টন এবং ২০১৮ সালে ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। অর্থাৎ, ২০১৯ ও ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৮ শতাংশ পেঁয়াজ কম আমদানি হয়েছে।

ভারতের একটি সূত্র জানায়, দেশের সব বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে।

যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে সকালের দিকে ৫০ টন পেঁয়াজ ঢোকার পরপরই দেশের সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেঁয়াজ রফতানিকারকদের সংগঠন।

বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল রফতানিকারক সমিতির পক্ষে ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষ বলেন, পেঁয়াজ রফতানিকারক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে না। সে কারণে অনেকগুলো গাড়ি বর্ডারে দাঁড়িয়ে আছে।

বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েল জানান, ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য শুরুর পর থেকে ২৫০ মার্কিন ডলারে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে।

ভারতের নাসিকে বন্যার কারণে সেখানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের রফতানিকারকরা স্থানীয় বাজারদর হিসাবে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজের রফতানি করবে না। এ কারণে তারা পেঁয়াজের রফতানি সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে।