পেঁয়াজ আমদানীতে সক্রিয় বড় শিল্পোদ্যোক্তারা

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০৯-২০ ০৮:২৪:০১


হঠাৎ করে ভারত সরকারের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় দেশে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। এই অস্থিতিশীল বাজারকে স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে সমুদ্রপথে পণ্যটি আমদানিতে সক্রিয় হয়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এরই মধ্যে বড় পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। পাশাপাশি  মেঘনা, সিটি ও বিএসএম গ্রুপও ঋণপত্র (এলসি) খোলা শুরু করেছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরেও ভারত হঠাৎ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় দেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছিল। অস্থিতিশীল বাজার স্বাভাবিক করতে সেবারও ভারতের বাইরে বিকল্প উৎস থেকে মসলাপণ্যটি আমদানি করেছিল এস আলমসহ কয়েকটি শিল্প গ্রুপ।

গত বছরের মতো এবারো ভারত হঠাৎ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর পরই ছোট পরিসরে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল। তবে শনিবার থেকে মূলত শিল্পোদ্যোক্তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ এস আলম প্রথম দফায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির পদক্ষেপ হিসেবে আজ এলসি খুলবে। এজন্য নেদারল্যান্ডসে বুকিং কার্যক্রমও সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ব্যাপারে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিন বলেন, রোববার (আজ) প্রথম দফায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলব। এর পুরোটাই সমুদ্রপথে আনা হবে নেদারল্যান্ডস থেকে। গত বৃহস্পতিবারই এজন্য দেশটিতে বুকিং নিশ্চিত করেছি। এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এ চালান পৌঁছবে বলে আশা করছি। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে সহযোগিতা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই এসব পেঁয়াজ এনে আমরা কোনো ব্যবসায়ীর হাতে কিংবা আলাদাভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বাজারে ছাড়ব না। একসঙ্গে বেশি না এনে বরং সরকারের যত প্রয়োজন হবে আমরা ততই আমদানির প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। গতবার আমরা একসঙ্গে অনেক বড় পরিসরে আনার চেষ্টা করেছিলাম। যেহেতু সাগরেই পচনশীল পণ্যটির মাসখানেক থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে রফতানিকারক দেশে বিশেষায়িত কনটেইনারের প্রাপ্যতাসহ বন্দরের ছাড়করণ কার্যক্রম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এদিকে দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্য বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপ প্রথম দফায় সাড়ে চার হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির পদক্ষেপ হিসেবে এরই মধ্যে এলসি খুলেছে। মিসর ও নেদারল্যান্ডস থেকে এসব পেঁয়াজের চালান পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার।

বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে সাড়ে চার হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্দেশ্যে এলসি খুলেছি। নেদারল্যান্ডস ও মিসর থেকে সমুদ্রপথে আনা হবে পেঁয়াজের এ চালান। এক মাসের মধ্যেই এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছার কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল জেটিতে মাত্র সাতটি কনটেইনার জাহাজ অবস্থান করেছে। অথচ গত বছরের একই সময়ে জেটিতে এর প্রায় দ্বিগুণ ১২টি কনটেইনার জাহাজ অবস্থান করেছিল। পণ্য খালাসের জন্য তখন জেটি খালি পেতে বহির্নোঙরে অবস্থান করেছে গড়ে ২০ থেকে ২২টি জাহাজ। সেক্ষেত্রে এবার আর জেটি খালি পেতে বহির্নোঙরে জাহাজকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ এ ব্যাপারে বলেন, গত বছর জাহাজ পৌঁছার পর পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় যে পরিস্থিতি ছিল এবার সে রকম হবে না। তখন পেঁয়াজের জাহাজকে দ্রুত ভেড়ার সুযোগ দিতে অন্য জাহাজকে অপেক্ষায় রাখার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি এবং বন্দরের দক্ষতায় এখন বহির্নোঙরে জেটি খালি পাওয়ার অপেক্ষায় জাহাজ বসে থাকতে হচ্ছে না। এক মাস পরও পরিস্থিতি ভালো থাকবে। তাছাড়া এবার চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে কোনোভাবেই পেঁয়াজের চালান পড়ে থাকতে দিচ্ছি না, দেয়াও হবে না। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও নির্দেশনা রয়েছে।