৬৩% গ্রামীণ পরিবার ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-২১ ১৭:০৭:৩৯
অনলাইনে ডিজিটাল মাধ্যমে কৃষকের জানালা কিংবা ই-বালাইনাশক প্রেসক্রিপশন—কৃষকের জন্য এ ধরনের পরামর্শমূলক নানা ই-কন্টেন্ট পাওয়া যায় ডিজিটাল মাধ্যমে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিখন-প্রশিক্ষণে চালু রয়েছে মুক্তপাঠ ও শিক্ষক বাতায়নের মতো নানা উদ্যোগ। সরকারের নানা অনুদান-প্রণোদনা পৌঁছার প্রক্রিয়াও ডিজিটালাইজেশনের আওতায় চলে আসছে। যদিও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় এসব ভালো উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে না প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বড় অংশ। গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের গ্রামীণ জনপদের ৬৩ শতাংশ পরিবারেরই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। আর ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা নেই ৮৭ শতাংশ পরিবারের।
সারাদেশের গ্রামাঞ্চলের পরিবারগুলোর ইন্টারনেট ব্যবহার বিষয়ে জানতে গত বছরের শেষের দিকে দেশের পার্বত্য অঞ্চলের বাইরে ৬০টি জেলায় একটি জরিপ চালায় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)। এজন্য ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর—এ তিন মাসে ৬ হাজার ৫০০ পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করে গবেষক দল। জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় ‘ফার্স্ট অ্যান্ড সেকেন্ড লেভেল অব ডিজিটাল ডিভাইড ইন রুরাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের গ্রামীণ জনপদের মাত্র ৩৭ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সে হিসাবে ৬৩ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারে যে দক্ষতা প্রয়োজন তা রয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ পরিবারের। অর্থাৎ ৮৭ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতাই নেই।
গ্রাম অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবার প্রায় পুরোটাই এখনো সেলফোন ডাটানির্ভর। গ্রামীণ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বড় অংশের ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, গবেষণায় যে তথ্য-উপাত্তের কথা বলা হচ্ছে সেটি অস্বীকারের সুযোগ নেই। যে ডিজিটাল ডিভাইডের কথা বলা হচ্ছে, সেটি নানাভাবে রয়েছে। ইন্টারনেট প্রাপ্যতা ও দক্ষতার ক্ষেত্রে শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে। এখন গ্রামাঞ্চলের ইন্টারনেট ব্যবহারের যে বৈষম্যের কথা বলা হচ্ছে, এটি কভিডের কারণে অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষা খাত থেকে নানা ডিমান্ড আসছে আমাদের কাছে। এখন গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের যে সংকট সেটির মূল কারণ হচ্ছে অবকাঠামোর অভাব। আসলে গ্রাম পর্যায়ে অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট সেবার মান খুবই খারাপ। আর কেবল নেটওয়ার্কও ইউনিয়ন পর্যায়ে ভালোভাবে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আরেকটি বড় সংকট হচ্ছে ডিভাইসকে কেন্দ্র করে। এ সমস্যার সমাধানে আমরা দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে ডিভাইস বাজারে আনার চেষ্টা করছি। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতার ক্ষেত্রেও বেশ ঘাটতি রয়েছে।
বিআইজিডির গবেষণায় খাতভিত্তিক বিভাজনে দেখা গেছে, কৃষি খাতে কর্মরতদের ইন্টারনেট প্রাপ্যতা সবচেয়ে কম। কৃষি জনগোষ্ঠীতে ইন্টারনেট প্রাপ্যতার হার মাত্র ১৭ শতাংশ। আর ইন্টারনেট প্রাপ্যতার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে শিক্ষার্থীরা, তাদের ৭০ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যারা বেকার বা অ-কৃষি খাতে কর্মরত তাদের তুলনায়ও শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট দক্ষতায় এগিয়ে। আর কৃষিতে যুক্তদের দক্ষতা সবচেয়ে কম। সব মিলিয়ে দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারে শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে এবং বেকাররা সবচেয়ে পিছিয়ে।
গ্রামীণ বাংলাদেশে ইন্টারনেটের প্রাপ্তি, ব্যবহার ও দক্ষতার ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক ব্যবধান রয়েছে বলেও উঠে এসেছে ওই গবেষণায়। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ও অনলাইন দক্ষতা—উভর ক্ষেত্রেই নারীদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন পুরুষরা। আর বিভাগীয় পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগের দিক থেকে রংপুর সবচেয়ে পিছিয়ে। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এ হার সবচেয়ে বেশি, ঢাকা ও খুলনা রয়েছে তার পরেই। অনলাইন দক্ষতার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীর সঙ্গে রংপুরের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। অনলাইন দক্ষতায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে বরিশাল এবং তার পরেই ময়মনসিংহ। ইন্টারনেট ব্যবহারে খুলনার অবস্থান বেশ ভালো। এক্ষেত্রে সিলেটের অবস্থা খুব খারাপ এবং অনলাইন দক্ষতা ও ব্যবহারেও এ বিভাগ বেশ পিছিয়ে।
সানবিডি/এনজে