এশিয়ার বাজারে কমছে চালের দাম
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৯-২৭ ১৭:০৫:৫৫
বর্তমানে এশিয়ায় চাল রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড। গত সপ্তাহে তিনটি দেশেই রফতানিযোগ্য চালের দাম কমতির দিকে ছিল। ফিলিপাইন আমদানি সাময়িক স্থগিত করায় ভিয়েতনামে, সরবরাহ আগের তুলনায় বাড়ায় থাইল্যান্ডে এবং মুদ্রাবাজারে ভারতীয় রুপির দরপতন ভারতে চালের দাম কমিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে সামগ্রিকভাবে খাদ্যপণ্যটির দরপতনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে চাহিদায় মন্দা ভাব। খবর রয়টার্স ও সাকসেসফুল ফার্মিং।
বর্তমানে বিশ্বে চীনের পর ভারত দ্বিতীয় শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। তবে খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় ভারত শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সর্বশেষ সপ্তাহে ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৩৭৯-৩৮৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। আগের সপ্তাহেও ভারতে প্রতি টন রফতানিযোগ্য চাল ৩৮৭-৩৯৪ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনপ্রতি সর্বোচ্চ ৯ ডলার কমেছে।
ভারতের বাজারগুলোতে রফতানিযোগ্য চালের দরপতনের পেছনে চাহিদা কম থাকা ও রুপির বিনিময় মূল্য কমে যাওয়াকে চিহ্নিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্ধ্র প্রদেশের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে রফতানি হওয়া চালের বড় ক্রেতা এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো। জুলাই ও আগস্টে ভারত থেকে এসব দেশে চাল রফতানি বাড়তির দিকে ছিল। সেই তুলনায় সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যটির রফতানি চাহিদা রয়েছে তুলনামূলক কম। স্বাভাবিকভাবে চাহিদায় মন্দা ভাব ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য চালের দাম কমিয়ে দিয়েছে।
একই সঙ্গে রুপির দরপতন চালের দাম কমে যাওয়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলেও জানান ভারতীয় ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা। বৃহস্পতিবার মুদ্রাবাজারে প্রায় এক মাসের মধ্যে ভারতীয় রুপির দর সবচেয়ে কমে এসেছিল, যা চালের ক্রম দরপতনকে আরো জোরালো করে তুলেছে।
সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে ২০২০-২১ মৌসুমের জন্য শস্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে এ পূর্বাভাস শুধু খরিফ মৌসুমের জন্য দেয়া হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২০-২১ মৌসুমে (খরিফ) ভারতে সব মিলিয়ে ১০ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত পাঁচ মৌসুমের গড়ের তুলনায় এবারের খরিফ মৌসুমে ভারতে চাল উৎপাদন বাড়তে পারে ৬৭ লাখ টন। গত পাঁচ খরিফ মৌসুমে দেশটিতে গড়ে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। এ পূর্বাভাস সত্য হলে ভারতের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে মন্দার মুখে পড়তে পারে চালের দাম।
তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধিতে আশার আলো দেখছেন ভারতীয় ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা। তাদের মতে, মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে বাংলাদেশ চাল আমদানি বাড়াতে পারে। ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে ও পরিবহন ব্যয় তুলনামূলক কম লাগায় বাংলাদেশী আমদানিকারকদের কাছে ভারতের বাজার থেকে চাল আমদানি করা সবচেয়ে লাভজনক। ফলে বাংলাদেশ আমদানি বাড়ালে ভারতের বাজারে চালের চাহিদা বাড়তে শুরু করবে। তখন ভারতে চালের দাম কিছুটা হলেও বাড়তে পারে। তবে এ সম্ভাবনার পুরোটাই নির্ভর করছে বাংলাদেশে চালের বাজার পরিস্থিতি ও সরকারি নির্দেশনার ওপর।
ভারতের মতো অনেকটা একই চিত্র দেখা গেছে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ডেও। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটির বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৩৭৫-৩৯৫ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়েছে। আগের সপ্তাহেও থাইল্যান্ডে প্রতি টন রফতানিযোগ্য চাল ৩৮০-৫০৪ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনপ্রতি সর্বোচ্চ ৯ ডলার কমেছে।
এ দিতে ব্যাংককভিত্তিক ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিনের খরা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক হয়ে আসছে থাইল্যান্ডে চালের সরবরাহ। বাজারে খাদ্যপণ্যটির সরবরাহ আগের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। সেই তুলনায় বাড়েনি চালের বেচাকেনা ও চাহিদা। এ পরিস্থিতি থাই চালের দরপতনে ভূমিকা রেখেছে। অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরুর দিকে থাইল্যান্ডের বাজারে নতুন মৌসুমের চাল উঠবে। তখন সরবরাহ আরো বেড়ে থাই চালের দাম বর্তমানের তুলনায় কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সানবিডি/এনজে