১১ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল
প্রকাশ: ২০১৫-১২-১৭ ২০:০৪:৫৪
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর আলোচিত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জলসহ ১১জনকে অভিযুক্ত করে গত ৩০ নভেম্বর রাজশাহীর চীফ মেট্রোপলিটিন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিদর্শক রেজাউস সাদিক।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্রে ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হলেন, রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের সেকশন অফিসার নাসরিন আখতার রেশমা, তার স্বামী যুবদল নেতা আবদুস সামাদ পিন্টু, পিন্টুর সহযোগী আরিফুল ইসলাম মানিক, সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালু, সবুজ শেখ, আল মামুন, ইব্রাহিম খলিল ওরফে টোকাই বাবু, আরিফ, সাগর ও জিন্নাত আলী। এরমধ্যে উজ্জল, আরিফ, সাগর ও জিন্নাত পলাতক রয়েছে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক বলেন, এ মামলার আগের তদন্তকারী কর্মকর্তারা রেশমার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে তদন্ত করেছেন। আমার তদন্তেও একই বিষয়টি ওঠে এসেছে। রেশমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জেরে পিন্টু ও তার সহযোগীরা শফিউলকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এই খুনের ঘটনা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জলের পরিকল্পনা মোতাবেক হয়েছে। এতে রেশমা তার স্বামীকে প্ররোচিত করেন বলে তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে স্বীকার করেছেন।
তিনি জানান, এ হত্যাকা-ের ৫ ঘণ্টার মাথায় ফেসবুক পেজে হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেয় কথিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২। এ বিষয়ে ব্যাপক তদন্তের পরও তদন্তে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ মেলেনি। হত্যাকা-ের মোটিভ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতেই ওই স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ চৌদ্দপাই এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে দিনেদুপুরে রাবির প্রফেসর একেএম শফিউল ইসলামকে ধারালো চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে কোপানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে নগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন মতিহার থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন। এরপর ২৩ নভেম্বর এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যুবদলের পিন্টুসহ ৬ জনকে আটক করে ঢাকা নিয়ে যায় র্যাব। তখন সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব জানায়, আটক যুবদল নেতা পিন্টুর স্ত্রী রেশমার দ্বন্দ্বের জের ধরে হত্যাকা- ঘটনার কথা স্বীকার করেছে আটকৃতরা এবং এর মূল পরিকল্পনাকারী রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জল। তবে ২৫ নভেম্বর আটক ৬ জনকে আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু তদন্তে আশানুরুপ অগ্রগতি না হওয়ায় চলতি ২১ জানুয়ারি মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা শাখায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আসিকুর রহমান। গোয়েন্দা পুলিশ এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে যুবদল নেতা পিন্টুর স্ত্রী রেশমাসহ ২০ জনকে আটক করে। চলতি বছরের ৭ মার্চ রেশমাকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর রেশমাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ১৯ মার্চ রেশমা হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। দীর্ঘদিন তিনি মামলাটি তদন্ত করার পর পরিদর্শক আসিকুর রহমানকে আরএমপি থেকে বদলি করার পর গত অক্টোবর মাসে তদন্তের দায়িত্ব পান রেজাউস সাদিক।