ব্লগার রাজীব হত্যায় ২ জনের ফাঁসি, ১ জনের যাবজ্জীবন
আপডেট: ২০১৫-১২-৩১ ২০:০৬:১৭
বহুল আলোচিত ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান শায়খুল হাদীস মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এটি প্রথম কোনো ব্লগার হত্যা মামলার রায়। হত্যাকাণ্ডের দুই বছর সাড়ে নয় মাসের মাথায় এই রায় হলো।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে এ রায় দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ।
গত ২৮ ডিসেম্বর (সোমবার) ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ যুক্তি-তর্কের শুনানি শেষে রায়ের জন্য এই তারিখ ধার্য করেছিলেন।
গত ২৪ ডিসেম্বর এ মামলায় যুক্তি-তর্ক শুনানি শুরু হয়। এরপর ২৭ ডিসেম্বর তা অব্যাহত থাকে এবং ২৮ ডিসেম্বর ওই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
মামলাটিতে ৫৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে রাজীবের ছোট ভাই স্থপতি নেওয়াজ মর্তুজা হায়দারও রয়েছেন।
তবে রাজীব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রেদোয়ানুল আজাদ রানা পলাতক রয়েছেন। মামলাটিতে ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি চার্জশিট দাখিল করা হয়।
এ মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন : আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান জসীম উদ্দিন রাহমানী, এহসানুর রেজা রুম্মান, নাফিজ ইমতিয়াজ, ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ, মাকসুদুল হাসান অনিক, মো. নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ, সাদমান ইয়াছির মাহমুদ ও রেদোয়ানুল আজাদ রানা।
আত্মপক্ষ শুনানিতে পলাতক আজাদ রানা বাদে সব আসামিই হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। অথচ এদের মধ্যে পাঁচজন হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এর আগে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এরা হলেন ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দীপ, এহসানুর রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় এ মামলা করেন। মামলার তদন্তে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে উঠে আসে।
তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান শায়খুল হাদীস মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ আটজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/১০৯/৩৪ ধারায় অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. মাইনুল ইসলাম। মামলা ভিন্ন খাতে নেয়ার অভিযোগে তদন্তভার থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাত শিক্ষার্থী ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মুহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানীর জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। গ্রেপ্তার হওয়া নর্থ সাউথের ছয় শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেয়া তাদের জবানবন্দি ও তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আসামিরা জসীমউদ্দিন রাহমানীর বই পড়ে, সরাসরি তার বয়ান ও খুতবায় অংশ নিয়ে ‘নাস্তিক ব্লগার’দের খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন।
ব্লগারদের সিরিজ হত্যাকাণ্ডের পর এটিই প্রথম রায়। ব্লগার রাজীব হত্যার পর একে একে ব্লগার অভিজিৎ, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নিলয় ও সর্বশেষ ব্লগার অভিজিতের বই প্রকাশের অভিযোগে প্রকাশক দীপনকে হত্যা করা হয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস