মাটির হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে গোবর সারের ব্যবহার

জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২১-০২-০৩ ১৭:২৮:৫৬


মাটির হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে কৃষকরা গোবর সার ব্যবহারে বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। এক সময় কৃষকের ফসল উৎপাদনে গোবর সারই ছিল একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় গোবর সারের স্থান দখলে নেয় রাসায়নিক সার।

রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরাশক্তি কমে যাওয়ায় চাষিরা আবারও জৈব সার ব্যবহারে ঝুঁকে পড়েছেন। জমিতে গোবর সার ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ বলে মনে করছেন অনেকে। কৃষি প্রধান উপজেলা হিসেবে খ্যাত যশোরের চৌগাছা।

উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রতিটি এলাকা সব ধরনের ফসল উৎপাদনে অত্যন্ত উপযোগী। এ জনপদের কৃষকরা এমন একটি সময় পার করেছে যখন মাঠে ফসল উৎপাদনে সার হিসেবে গোবর সারকে ব্যবহার করতেন। সে সময়ে জমিতে ফসলের ফলন কম হলেও প্রতিটি এলাকার জমি ছিল অত্যান্ত উর্বর।

৭০ কিংবা আশির দশকে কৃষক জমিতে এক বার গোবর সার প্রয়োগ করে সারা বছরই ওই জমিতে ফসল উৎপাদন করেছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধিরে ধিরে গোবর সারের ব্যবহার কৃষক ভুলতে বসে। আর গোবর সারের স্থানটি দখল করে নেয় রাসায়নিক সার। বছরের পর বছর জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগে নানামুখি সমস্যায় চাষিরা। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে এ অঞ্চলের কৃষক আবারও গোবর সার ব্যবহারে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন বলে কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

উপজেলার স্বরুপদাহ, নারায়নপুর, সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম এলাকার মাঠে যেয়ে দেখা যায়, আমন ধান কেটে কৃষক বাড়িতে নিয়ে গেছে বেশ আগেই, ফসলি জমি এখন খালি। এই সময়ে তারা জমিতে গোবর সার ফেলা শুরু করেছে। বিঘার পর বিঘা জমিতে ফেলে রাখা হয়েছে গোবর সার, কেউ কেউ ওই সার জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছেন। স্থানীয় কৃষক মুজাহিদ, গোলাম মো¯তফা, হারুন অর রশিদ, জামাল হোসেন বলেন, বছরের পর বছর রাসায়নিক সার জমিতে ব্যবহার করে মনে হচ্ছে জমির শক্তি কমে গেছে। আগে যেখানে ৫ কেজি রাসায়নিক সার দিলে ফসল হতো এখন সেই জমিতে ২০ কেজি সার দিতে হচ্ছে। তারপরও ভাল ফলন হচ্ছে না। এ ছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি ক্ষেতে কোন কেঁচো বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ দেখা যাচ্ছে না।

মনে হচ্ছে সার ও বিষ প্রয়োগে জমি থেকে এ সব কিছু হারিয়ে গেছে। তাই রাসায়নিক সারের আদলে জৈব সার অর্থাৎ গোবর সার ব্যবহার করা শুরু করেছি। তবে জমির যে অবস্থা তাতে মনে হয়না শুধু গোবর সার দিয়ে ফসল হবে, পরিস্থিতি বুঝে অল্পস্বল্প রাসায়নিক সার ব্যবহার করবো। এ ভাবে সকলেই যদি গোবর সার ব্যবহার করে তাহলে রাসায়নিক সারের খুব প্রয়োজন হবে না বলে অনেকে মনে করছেন।

সূত্র জানায়, রাসায়নিক সার কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকরা নানান দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে। এ সব ব্যবহার করে সমস্যা থেকে উত্তরনে তাদের প্রচেষ্টা উল্টো তাদের বিপদে ঠেলে দিয়েছে। কেননা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক অতি প্রয়োগের ফলে কৃষক দেখেছেন যে, ফসল গুলোতে রোগ ও পোকার আক্রমনের হার যেন বেড়েই যাচ্ছে।

এ ছাড়া জমিতে ঘাস মারা বিষ প্রয়োগ করে জমির শক্তি বহুলাংশে কমে যাচ্ছে। স্বল্প সময়ের ভিতরে সমস্যা সমাধানে কৃষক রাসায়নিক সার, আগাছানাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে করে পরিবেশ তো ক্ষতি হচ্ছেই পাশাপাশি মাটির ভিতরে থাকা অনুজীবগুলো বিষ ক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শৈলেন দাস জানান, এ সব অনুজীব ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। অতীতে শহরের আবহাওয়া দূষিত আর গ্রামের আবহাওয়া দূষনমুক্ত মনে করা হতো। বর্তমানে জমিতে অতি মাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে বাতাসও দূষিত হচ্ছে। উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই প্রক্রিয়া থেকে বের হওয়া জরুরী। গ্রামের সব কৃষককে জৈব সার ব্যবহারে আরও বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করতে সংশ্লিস্টদের এগিয়ে আসতে হবে।