হাইজিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত অবমুক্ত

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০২-১০ ১৩:৪৯:০৬


জাতির পিতা মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পুষ্টিকর ধান গবেষণা দলের বিজ্ঞানীরা হাইজিংকসমৃদ্ধ জাত ব্রি ধান ১০০ উদ্ভাবন করেছেন। মঙ্গলবার জাতীয় বীজ বোর্ড নতুন এ জাতটির অনুমোদন দিয়েছে।

ব্রি ধান ১০০-তে জিংকের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৫.৭০ মিলিগ্রাম। দেশের ১০টি স্থানে পরীক্ষামূলক চাষাবাদে গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৬৯ টন পাওয়া গেছে। জাতটির জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ জাতীয় বোরো মৌসুমে চাষের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্রি ধান-১০০ এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

এতে রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম। তবে রোগবালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৭ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ৮.৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষণা মাঠে হোমোজাইগাস কৌলিক সারি নির্বাচন করা হয়।

৫ বছর ফলন পরীক্ষার পর কৌলিক সারিটি ২০১৭ সালে ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের গবেষণা মাঠে ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। ২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হয়। ব্রি ধান ১০০ এর জীবনকাল ব্রি ধান ৭৪ এর প্রায় সমান।

এ জাতের ফলন ব্রি ধান ৭৪ এর চেয়ে সামান্য বেশি হলেও (৪.৫) ধানের গুণগত মান ভালো অর্থাৎ চালের আকৃতি মাঝারি চিকন এবং ব্রি ধান ৮৪ এর চেয়ে ফলন প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি। ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর অর্থাৎ অগ্রহায়ণের এক তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ডক্টর মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘ব্রি ধান ১০০ মুজিব শতবর্ষে ব্রির শততম জাত হিসেবে অবমুক্ত হওয়ায় একটি বিশেষত্ব পাবে। এ জাত উচ্চমাত্রার জিংকসমৃদ্ধ। ফলন ব্রি ধান ২৯ থেকে বেশি এবং জীবনকাল ব্রিধান ২৮ এর মতো, যা আমাদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

আমাদের পরিকল্পনা অতিদ্রম্নত এ জাতটি কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠবে। জিংকসমৃদ্ধ এ ধান উৎপাদন বৃদ্ধি ও পুষ্টির জোগান মেটাতে বড় ভূমিকা রাখবে। মানুষের পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রি প্রিমিয়াম গুণ সম্পন্ন ও রপ্তানিযোগ্য ১১টি, এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ধান, ডায়বেটিক ধান এবং প্রো-ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইসের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করেছে। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় খরা, লবণ সহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে।’

জাতীয় বীজ বোর্ডের সভাপতি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, মুজিব শতবর্ষে উচ্চজিংকসমৃদ্ধ ব্রি ধান ১০০ অবমুক্ত করতে পারা খুবই আনন্দের। আশা করা যায়, এটি একটি মেগা ভ্যারাইটি হবে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অধিকাংশ ক্যালরি, প্রোটিন ও মিনারেল আসে ভাত থেকে। ভাত তাদের কাছে সহজলভ্য। জিংকসমৃদ্ধ এ জাতটি উদ্ভাবনের ফলে মানুষের জিংকের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে।’

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, ‘মানব শরীরের জন্য জিংক খুব প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। মানব দেহে এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শর্করার ভাঙনে, দেহ কোষের বৃদ্ধিতে এবং পলিপেটাইড গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, চুল পড়া রোধ এবং গ্যাসটিন নিঃসরণের এর মাধ্যমেই স্বাদের অনুভূতি বা রুচি বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

হাড়ের বৃদ্ধির জন্য কেরাটিন তৈরি ও তার পরিপক্বতা, ত্বকের ক্ষত সারানো, আবরনি কোষের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজে মানব শরীরে জিংকের প্রয়োজন হয়। উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীদের জিংকের অভাব হলে বেটে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জিংকের অভাবে ডায়রিয়া ও এলার্জির মতো রোগ দেখা যেতে পারে। কিন্তু জিংক সমৃদ্ধ জাতের ভাত খেলে শরীরে জিংকের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটে যাবে।

বাংলাদেশের প্রায় ৪৪.৬ ভাগ শিশু এবং ৫৭.৩ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক নারী জিংকের অভাবজনিত রোগে ভুগছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে জিংকের দৈনিক চাহিদা প্রায় আট থেকে ১২ মিলিগ্রাম এবং শিশুদের দৈনিক চাহিদা তিন থেকে পাঁচ মিলিগ্রাম। নতুন অনুমোদনকৃত ব্রি ধান ১০০ তে জিংক এর পরিমাণ ২৫.৭ মি.গ্রাম। এটি মানুষের শরীরে জিংকের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তার ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ মিটাতে পারে।