আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী শিক্ষকের ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৩-০৮ ১৪:০৯:৪১


আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নানা আয়োজন ও কর্মসূচির মাধ্যমে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এবারের নারী দিবসের স্লোগান হলো ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীরা বড় ভূমিকা রেখেছে। নারীর অগ্রগতি দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র পাল্টে দেওয়ার ক্ষেত্রেও রেখেছে অনন্য অবদান। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, “জগতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৫৭ সাল থেকে নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন আন্দোলন, সম্মেলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতঃপর ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ই মার্চ কে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে (পূর্বে যা ছিল আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। নিচে নারী দিবসে কয়েকজন নারী শিক্ষকের কথা তুলে ধরা হলো।

অধ্যাপক শামিম আরা বেগম, বিভাগীয় প্রধান, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা কলেজ: আমি দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা কলেজে (বয়েজ কলেজ) অধ্যাপনা করে আসছি। কখনো শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং বর্তমানে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউটস গ্রুপের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু একজন নারী হয়েও (বয়েজ কলেজে) এ ধরনের দায়িত্ব পালন কালে কোনো ধরনের বাধা বা বৈষম্যের স্বীকার হই-ই নি বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমি এবং আমার শিক্ষার্থীরা সাফল্য অর্জন করেছি। আমি মনে করি, আমার প্রতিবন্ধকতাহীন চলার পথে আমার মূল পাথেয় হচ্ছে আমার দক্ষতা, যোগ্যতা এবং আত্মবিস্বাসী মনোভাব। আমি এটাও মনে করি একজন শিক্ষকই পারেন শিক্ষার্থীর মধ্যে এধরনের মূল্যবোধ তৈরি করা। যে প্রত্যেক মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে তার অধিকার প্রদান করা, এক্ষেত্রে লিঙ্গ কোনো বাধা হতে পারেনা। আমি দৃঢ়ভাবে এটাও বিশ্বাস করি, শুধু মাত্র শিক্ষা বা অর্থনীতির মুক্তিই নয় যেদিন নারী নিজেকে শুধু নারী না ভেবে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করবে এবং নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতার ওপর আস্থাশীল হয়ে আত্মমর্যাদায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে সেদিনই নারী পাবে তার যথাযথ মর্যাদা।

ড. আখতারা বানু, সহযোগী অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদেরকে ভীষণ লড়াই করে নারীদের এগিয়ে যেতে হয়। আমি যখন পিএইচডি করি অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে করতে হয়েছে। পরিবার, চাকরি সব কিছুর মধ্য দিয়ে করতে হয়েছে। আমি ঢাকা কলেজে প্রথম নারী বিএনসিসির প্লাটুন কমান্ডার হিসবে কাজ করি। এ জন্য দেশের বাহিরে অনেক সেমিনার করেছি। সবার সহযোগিতা পেয়েছি। ডিপার্টমেন্ট ও পরিবার চালানো খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল কিন্তু আমি পরিকল্পনামাফিক সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করে চলি তাই সমস্যা হয় না। তবে নারীদের এগিয়ে নিতে পরিবার, সমাজের আরো সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। আমি মেন্টাল হেল্থ নিয়ে কাজ করতে চাই প্রতিটি শিশুর মাঝে যাতে তারা সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠে। নারী দিবসে প্রত্যাশা হলো, আমাদের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে উদার মানসিকতা নিয়ে। নারীরা এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সকল নারীদের জানাই অভিনন্দন।

শ্রাবণী ধর, প্রভাষক, ব্যাবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা কলেজ: ৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিবসে আমি যে বিষয়টি বেশি ভাবছি সেটা হলো, নারী একটা গ-িতে আবদ্ধ। সেই গ-িটা নারীর মানসিক গ-ি।এই গ-িটাই নারীকে মানুষ হিসেবে ভাবতে বাঁধা দেয়। এর সাথে অর্থনৈতিক ভিত্তি না থাকাতে সিদ্ধান্তেও নারী থাকতে পারে না।পরিবারের বা ঘরের কাজ একবিংশ শতাব্দীর ২০ বছরে এখনও মেয়েদেরই। এখনো কন্যা সন্তান জন্ম সাদরে গ্রহণ করা হয় না। এই জায়গাগুলোতে নারী-পুরুষের উভয়েরই কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। নারীদের চক্ষুলজ্জা থেকে বের হয়ে এসে বিয়ের পরেও বাবা-মায়ের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। কারন বাবা-মা উভয়েরই। সংসারের আর্থিক দায়িত্ব যেমন নারী-পুরুষ উভয়েরই হওয়া উচিত, তেমন সংসারের কাজের দায়িত্বের জায়গাটাও দুজনেরই হওয়া উচিত। শিক্ষা, দায়িত্ব গ্রহণ, পারষ্পরিক সহযোগিতা এবং মানসিক মুক্তির মাধ্যমে নারী তার নিজস্ব গ-ি থেকে বের হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে; ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এই প্রত্যাশা করছি।