তিস্তা চুক্তি সইসহ ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে কর্মসূচী

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৩-২২ ১৫:৫০:৪৯


তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন ও তিস্তা চুক্তি সই করাসহ ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে আগামী বুধবার ২৩০ কিলোমিটার ব্যাপী তিস্তা নদীর দুই তীরে ১০ মিনিট স্তব্ধ কর্মসূচী পালনের ডাক দিয়েছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলন পরিষদ।

সোমবার সকালে নগরীর রাজা রামমোহন ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সন্মেলনে এই ঘোষনা দেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হাক্কানী।

সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রাগান্দীর সাথে একটি সমজতা স্বারক্ষ সই করেছিল বঙ্গবন্ধু। কিন্ত দীর্ঘ ৪৮ বছর অতিবাহিত হবার পরেও বাস্তবায়ন হয়নি। রংপুর বিভাগে ৮ জেলার প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। এই বিভাগে দারিদ্রের হার ৪৬ শতাংশ। তিস্তা তীরবর্তী কুড়িগ্রাম জেলায় দারিদ্রের হার ৭১ শতাংশ। লালমনিহাট জেলায় ৪২, গাইবান্ধা জেলায় ৪৭ ও রংপুর জেলায় ৪৩ শতাংশ।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে। সেই সাথে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতি হবে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমহোন সিং বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির একটি খসড়া প্রস্তত করেছিল। এর পর তা কোন অগ্রগতি হয়নি।

২০১৪ সালে ভারত একতরফা ভাবে তিস্তা নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বর্তমানে তিস্তায় ধু ধু বালু চরে পরিণত হয়েছে। পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় হাটাৎ করে পানিবন্টনের কথা বিরোধিতা করায় তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সেই সাথে ভারতিয় মিডিয়াগুলো তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে বিভ্রান্তকর খবর পরিবেশন করছে। তাই অবিলমে তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করে এই অঞ্চলের মানুষের দারিদ্রতার হাত থেকে বাঁচাতে হবে।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হলে রংপুর বিভাগের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেই সাথে গড়ে উঠনে শীল্পকারখানা, কৃষি ভিত্তিক প্রতিষ্টান, পোষকারখানা, রাস্তাঘাটসহ নানান উন্নয়ন মূখি কর্মকান্ড।

সংবাদ সন্মেলনে তিস্তা আন্দোলনের ৬ দফা পেশ করা হয়। ৬ দফার মধ্যে রয়েছে, তিস্তা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন ও অভিন্ন নদী হিসাবে ভারতের সাথে ন্যায্য পানির হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন এবং তিস্তা নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধারা নির্মাণ।

তিস্তার ভাঙ্গন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ভাঙ্গনের শিকার ভুমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন, তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন ও মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষি ভিত্তিক শীল্প করকারখানা গড়ে তোলা, তিস্তা নদীর শাখা প্রশাখা ও উপশাখাগুলোর সঙ্গে নদীর পুর্বেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখন, দুষনমুক্ত করা। নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করা। এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্থদেও ক্ষতিপুরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অধিকার ভিত্তিতে তিস্তা পাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

সংবাদ সন্মেলন শেষে তিস্তা পাড়ের একলাখ মানুষের স্বাক্ষরিত একটি বই রংপুর জেলা প্রশাসক আবিস আহসানের মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করে।

সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলন পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ড. তুহিন ওয়াদুদ, ছাদেকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম কানু মিয়া, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, আমিন উদ্দিন বিএসসি, মোজাফ্ফর হোসেন, গোপাল চন্দ্র বর্মণ প্রমুখ।