পাটের তৈরি পণ্য আশার আলো দেখাচ্ছে মরিয়মকে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৩-২৪ ১২:২৬:১২


করোনা ভাইরাসের কারণে বাবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। বেসরকারি স্কুলের চাকরিটাও চলে যায় মরিয়মের। সংসার চালানো যখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন দমে যাননি মরিয়ম। অদম্য মরিয়ম সংসারের হাল ধরেন।

ঠাকুরগাঁও শহরের সরকারপাড়া নিবাসী মরিয়ম বৃদ্ধ মা-বাবাকে বিয়ের আগে থেকে কখনো বুঝতে দেননি ছেলের অভাব। কখনো হয়তো টিউশনি করে, কখনো ছোট খাটো চাকরি করে, নিজের পড়াশোনা খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবা মায়ের হাতে যেটুকু পারা যায় তুলে দিয়েছে। কষ্ট করে এমএ পাশ করেন তিনি। চাকরি নেন এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতায়। স্বামী, সন্তান, শ্বশুর, শ্বাশুরি নিয়ে ভালোই চলছিল দিন কাল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বাবার ছোট ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে যায় ।

স্কুল কর্তৃপক্ষও তাকে আর চাকুরিতে বহাল রাখতে পারেনি। এতে তার ভাবনাগুলোর পরিবর্তন এনে দিল। হাজারো রকম দুঃশ্চিন্তায় জড়িয়ে যায় মরিয়মের জীবন। স্বামীর সংসারে থাকলেও এতদিন বাবা মা’কে সাহায্য করে আসছিলেন মরিয়ম। কিন্তু এখনতো তার আর চাকরি নেই। স্বামীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার বাবা মাকে সাহায্য করতে তাঁর বিবেকে বাধে।

ভাবনায় পড়ে সে কিছু একটা করতে হবে, নিজের সৃজনশীল প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনের সহযোগিতা নিয়ে পাট দিয়ে তৈরি করতে শুরু করেন বিভিন্ন পন্য। বিভিন্ন শো-পিস তৈরি করে অনলাইন সরবরাহ করতে শুরু করেন তিনি। আয়মান হস্তশিল্প নামে তৈরি করেন নিজস্ব একটি ফেসবুক পেজও। এতে ব্যাপক সাড়া পান তিনি। বেড়ে যায় চাহিদা, বেড়ে যায় তার কাজের স্পৃহা। একমাসের একটি ট্রেনিংও নিয়ে নেয় ঠাকুরগাঁওয়ের একটি বে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে।

কাজের গুণগত মান আরো বেড়ে যায়, মরিয়ম বলেন তিন হাজার টাকা পুজিঁ করে শুরু বর্তমানে তের হাজার টাকা পুজিঁ। মাসে সাত হাজার টাকার অর্ডার পেলে লাভ থাকে দুইহাজার টাকা যা কম হলেও থেমে নেই। তিনি বলেন, সংসারের সব কাজ শেষ করে নিজের আড়াই বছরের সন্তান ঘুমিয়ে গেলে তার কাজ শুরু হয়।

তিনি জানান, তাঁর পুঁজি খুব কম। যদি বড় রকমের কোন আর্থিক সহযোগিতা বা সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা পান তাহলে ব্যবসা আরো বাড়ানো সম্ভব। এভাবে এই পাটকে কাজে লাগাতে পারেন অনেক নারী। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।

মরিয়ম এখন শো-পিস, টেবিল ম্যাট, টিস্যু বক্স, কলমদানি, ফুলদানি, পুতুল, ব্যাগ ইত্যাদি বহু জিনিস তৈরি করেন এবং অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বিক্রি করছেন। সব রকম সহযোগিতা করছেন তার স্বামী রাকিব সাব্বির হিমেল। মরিয়মের ইচ্ছে আছে তার পণ্য এর জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।