তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিপর্যয়ের পেছনের কারন কী?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৩-৩০ ১০:১১:১৩
এক সপ্তাহ আগেই মনে করা হয়েছিল যে, তুরস্ক চলতি বছরের উদীয়মান-বাজারে সাফল্যের গল্পে পরিণত হবে। বিদেশি ব্যবসায়ীরা দেশটিতে নতুন করে বিনিয়োগের কথা ভাবছিলেন। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও বেশ গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে।
তুরস্কের মুদ্রা লিরা মানও অন্য সব দেশের মুদ্রার চেয়ে বেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। আগামী এক বছরেই হয়তো শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে পারত তুরস্ক। কিন্তু সেই আশায় পানি ঢেলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।
হুট করেই তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নাসি আগবালকে বরখাস্ত করেন এরদোয়ান। তার এমন সিদ্ধান্তে সবাই যেন হতবাক হয়ে পড়েন। গত দুই বছরে তিনজন গভর্নরকে বরখাস্ত করেছেন এই তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন নাসি আগবাল। তাকে বরখাস্ত করার ঘটনা সবার কাছেই যেন অপ্রত্যাশিত ছিল। এমনকি বিশ্লেষকরাও একে ভালোভাবে দেখছেন না। নাসি আগবালকে বরখাস্তের পরপরই তুরস্কের মুদ্রা লিরার দর ১৫ শতাংশ কমে গেছে।
গত বছরের নভেম্বরে দায়িত্ব পান নাসি আগবাল। ১৫ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনতে সুদের হার বাড়িয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি।
নাসি আগবাল গত সপ্তাহে সুদের হার ২ শতাংশ বৃদ্ধি করার পর তুর্কি মুদ্রার দর বাড়ে। গত দশ বছরের মধ্যে একদিনেই প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছিল যা ছিল এক নতুন রেকর্ড। এমনকি অর্থনীতিবিদরা যা আশা করেছিলেন তার দ্বিগুণ হয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা তুরস্কের তীব্র মুদ্রাস্ফীতির হারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কঠোর আর্থিক নীতিমালার আহ্বান করে আসছিলেন। তবে এখন এরদোয়ানের এমন সিদ্ধান্তে তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
আগবাল বরখাস্ত হওয়ার পর তুরস্কের শেয়ার বাজারে বড় দরপতন চোখে পড়েছে। দেশটির প্রধান শেয়ারবাজারে ১০ শতাংশ পতন ঘটেছে। চলতি বছর তুরস্কের অর্থনীতিতে যা অর্জিত হয়েছে আগবালকে সরিয়ে দেয়ার ঘটনায় সব অর্জন যেন এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
বিনিয়োগকারীরাও এখন তুরস্কে বিনিয়োগ করার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। চার মাসের মতো দায়িত্ব পালন করা আগবাল তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনাম ফিরিয়ে আনার যথেষ্ট চেষ্টা করে গেছেন। এতে তিনি বেশ সফলও বলা চলে। কিন্তু এরদোয়ানের একটি মাত্র সিদ্ধান্ত যেন সবকিছু নড়বড়ে করে দিল।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বেশ চাপে ছিলেন আগবাল। তাকে নিয়োগ দেয়ার একদিন পরেই দেশটির অর্থমন্ত্রী বেরাত আলবায়রাক পদত্যাগ করেন। কিন্তু এখন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে, তুর্কি সরকারে আবারও ফিরতে যাচ্ছেন বেরাত।
সুদের হার বৃদ্ধির পক্ষে ছিলেন না এরদোয়ান। সাম্প্রতিক সময়ে আগবালের বাড়ানো সুদের হারের সঙ্গে হয়তো তিনি একমত ছিলেন না। অনেকেই বলছেন, দ্বিমত থাকলেও হুট করেই আগবালকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত মোটেও ঠিক হয়নি।
ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবিন ব্রুকস বলেন, নতুন যাকে নিয়োগ দেয়া হবে তিনি কতদিন থাকতে পারবেন সেটাও নিশ্চিত নয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাহাপ কাভিসিওগলু। তিনি ক্ষমতাসীন দলের সাবেক সাংসদ ছিলেন। এই গভর্নর নাসি আগবালের মতো এতো দক্ষতার সঙ্গে মুদ্রার দর ধরে রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। সাবেক অর্থমন্ত্রী বেরাত আলবায়রাকের বেশ ঘনিষ্ঠ মনে করা হয় সাহাপ কাভিসিওগলুকে।
করোনা মহামারিতেও যখন ইউরোপের অনেক দেশ হিমসিম খাচ্ছে তখন তুরস্কের অবস্থা বেশ ভালোই ছিল বলা যায়। গত বছর দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ। সে সময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, চলতি বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
কিন্তু এরদোয়ানের এমন একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনীতির গতি এখন কোনদিকে যাবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে সবার আশঙ্কা সেটা খুব ভালো হয়তো হবে না। এক সময়ের পেশাদার ফুটবলার এরদোয়ান হয়তো তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে গোলটাই দিলেন। আর এর ফল ভোগ করতে হবে গোটা দেশকে।
সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট