আরও ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা চান গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৪-১১ ১১:৫৬:৫৫


আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ ও করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরও ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড প্রণোদনা চায় পোশাক খাত। এর মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে ৫ হাজার ও করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা চায় গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো এ তহবিল নিয়ে অচিরেই সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এছাড়াও প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, গতবারের মতো দীর্ঘ মেয়াদে গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হলে উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন প্রণোদনার দরকার হবে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সদ্য নির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শ্রমিকদের বেতন বোনাসের জন্য নতুন প্রণোদনার দরকার হবে। সামনে ঈদ। বেতন-বোনাস একসঙ্গে দেওয়া গার্মেন্ট মালিকদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফলে পুরনো প্রণোদনার টাকা ফেরতের জন্য সময় বাড়িয়ে দিতে হবে। নতুন করে আরও দশ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা লাগবে।

তিনি আরো বলেন, এই ১০ হাজার টাকার সবই আমরা শ্রমিকদের সরাসরি দিয়ে দেবো। আর যেভাবে কারখানা চলছে, এভাবে কারখানা চালিয়ে রাখতে পারলে ব্যাংকের টাকাও একদিন পরিশোধ করা যাবে। কিন্তু কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে মালিকরা পথে বসে যাবে।

বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সামনে যেহেতু ঈদ বা রোজা রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অনেকেরই দেনা রয়েছে। সে জন্য আমাদেরকে নতুন করে শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের জন্য অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন ঋণ সুবিধা দেওয়ার কথা আমরা বলছি।

গত বছরের চেয়ে এবার প্রণোদনা বেশি লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, গতবছর অনেকেই ঋণ পায়নি। তার মতে, ৫০ শতাংশ কারখানার মালিক এই প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছেন, বাকী ৫০ শতাংশ পাননি। শ্রমিকদের জন্য নতুন করে ১০ হাজার কোটির ঋণ ছাড়াও সরকার আগেরবার যে সুবিধাগুলো দিয়েছে, সেই সুবিধা যাতে সত্যিকারভাবে কাজে লাগাতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য এইসব প্যাকেজ থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য দীর্ঘ সময় দিতে হবে। যেমন, শ্রমিকদের জন্য যে ঋণ নিয়েছি, সেটা ১৮ কিস্তিতে শোধ দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমরা এটাকে ৬০ কিস্তিতে দিতে চাই। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৮ কিস্তিতে অধিকাংশ কারখানার মালিকের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। হাসপাতালগুলোয় রোগীদের জায়গা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের পরিকল্পনা করছে সরকার।

এর আগে গত ২ মার্চ একটি হোটেল করোনা পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পখাতে যে বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যে বিকেএমইএর সদস্যদের নিয়ে এক বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আসন্ন দুটি ঈদে শ্রমিকদের বোনাস ও বেতন-ভাতা পরিশোধে নতুন করে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা চায় পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ পোশাক খাতের সব মালিকরা। এছাড়া পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা কাটিয়ে উঠতে উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধে কমপক্ষে ১৪-১৫ বছর সময় দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। যদিও পরবর্তীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা যোগ করা হয়।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসন্ন দুই ঈদ পর্যন্ত পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নতুন করে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা দরকার। নতুন প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ এবং আগের প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের পরিমাণ একীভূত করে উদ্যোক্তাদের আরও এক বছর সময় দিতে হবে। এছাড়া ১৮ মাসের পরিবর্তে কমপক্ষে ৩৬ মাসের কিস্তি পরিশোধের সময় দিতে হবে। এর ফলে পোশাকখাত আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। অন্যথায় এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল ৪৫ লাখ মানুষ এবং পরোক্ষভাবে দুই কোটি মানুষ ও তাদের পরিবারের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

/সানবিডি/এএ