এক টাকায় খাবার পাচ্ছেন অসহায় মানুষ: আপনিও অংশ নিন

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-১৭ ১৫:৪২:২৫


নামে মাত্র এক টাকায় খাবার! রাজবাড়ীতে পথে পথে, খোলা আকাশের নীচে কিংবা রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে থাকা মানুষের জন্য এই এক টাকার খাবার চলে। এঁদের কেউ অভুক্ত থাকে সারারাত, কেউবা আরো বেশি। এক টাকায় এক প্যাকেট খাবার পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে অসহায় মানুষ গুলো, কেউবা লাইনে দাঁড়ায় খাবারের আসায়।

করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করায় রাজবাড়ীতে আটকা পরেছে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শতাধীক দিনমজুর। আটকা পড়া শ্রমজীবী মানুষ থাকা ও খাবার সংকটে পরলে তাদের পাশে দাঁড়ায় রাজবাড়ীতে ‘মানবিক সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিত খন্দকার রবিউল ইসলামের সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানাবক রাজবাড়ী’।

শুক্রবার লকডাউনের ৩য় দিনেও প্রতিদিনের ন্যায় আটকে পড়া শ্রমিক ও পথ শিশুদের মাঝে খাবার, বিতরণ করেছে রবিউলের নেতৃত্বাধীন সংগঠনটি।

অসহায় মানুষের সেবায় অঙ্গিকার বদ্ধ ২৪/৭ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সাংবাদিক খন্দকার রবিউল ইসলামের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল সেচ্চাসেবী সংগঠন মানিক রাজবাড়ী।করোনার প্রভাবে থমকে গেছে পুরো পৃথীবি।এর মাঝেই কর্মহীন হয়ে পরেছে মানুষ।রাজবাড়ী জেলা রেলের শহর হিসেবে পরিচিত যে শহরের প্রতিদিন ট্রেন যোগে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে জনদিতে রাজবাড়ীতে আসেন খেটে খাওয়া মানুষ।এইর মধ্যে শুরু হয়েছে লকডাউন। আর এই লকডাউনের ফলে রাজবাড়ীতে আটকা পরেছে দিনমজুর মানুষ গুলো খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল তাদের।

এই অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে লকডাউনের ২য়-দিন গতবছর ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিদিন ১শত অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করে করছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক রাজবাড়ী। প্রথম থেকে ৩০ এপ্রিল পযন্ত ফ্রিতে খাবার বিতর করে আসছিল সংগঠনটি।পরবর্তীতে তারাই মে-মাসের ১তারিখ থেকে শুরু করে ‘এক টাকার খাবার’ প্রকল্প। প্রকল্পটির আওতায়, দিনমজুর, ছিন্নমূল মানুষ, রেল স্টেশনে থাকা দরিদ্র পথ শিশু, পাগল ও বৃদ্ধরা এক টাকায় পেট ভরে খেতে পারছে। আবার বছর গুরে এপ্রিল এর ৫তারিখ থেকে শুরু হয়েছে লক ডাউন আবারও একই ধারাবাহিকতায় এক টাকায় খাবার বিতরণ শুরু করেছে মানবিক রাজবাড়ী।

‘এক টাকার খবার’ মানবিক রাজবাড়ীর ফেসবুক পেইজ এর পাতায় লেখা হয়েছে, ‘ক্ষুধার মাঝে বেড়ে উঠা এক মানুষের হাত ধরে মানবিক রাজবাড়ীর এই প্রকল্পটি শুরু। প্রতিদিন ১০০ জনের রান্না হয়। এরপর রিক্সায় চলে যায় নির্দিষ্ট জায়গায়। এক টাকার বিনিময়ে যে কোনো ছিন্নমূল, দিনমজুর, পথশিশু কিংবা বৃদ্ধ কিনে নিতে পারে এই খাবার।’

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক খন্দকার রবিউল ইসলাম বর্তমানে জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ, বাংলাদেশ পোস্ট ও বিডিফিন্যান্সিয়াল নিউজ২৪.কম এর রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।

এবিষয়ে সাংবাদিক রবিউল ইসলাম বলেন, ক্ষুধার্তকে এক বেলা খাওয়ানোর আনন্দ থেকে মানবিক রাজবাড়ীর যাত্রা শুরু। আর্থিক অসংগতি থাকা মানুষের জন্য এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে মানবিক রাজবাড়ীর মাধ্যমে। মাত্র এক টাকার বিনিময়ে এক বেলার সুস্বাদু খাবার তাদের পরিতৃপ্তি জোগাতে অনেকটাই সক্ষম হবে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, আসলে প্রথম দিকে আমরা ফ্রিতে খাবার দিতাম এতে অনেক মানুষ তাদের প্রতি একটু ভিন্ন চোখে তাকাতো তারাও লজ্জা বোধ করতো।পরে আমরা সকলের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ফ্রিতে খাবার না দিয়ে এক টাকা করে নিব এতে করে মানুষ গুলোকে আর লজ্জায় পরতে হবে না। এক বেলার এই খাবার যেন অসহায় মানুষগুলোকে ভিক্ষাবৃত্তি বলে মনে না করায় সেজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ন্যূনতম একটি মূল্য রাখা হয়। আর সেই ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক টাকা। অপরের দেওয়া খাবার খেতে যেন অসহায় মানুষগুলোকে ভাবতে না হয় তারা সত্যিকার অর্থেই খাবারের মূল্য পরিশোধে অপারগ।

সাংবাদিক রবিউল বলেন, দেশজুড়ে লগডাউন ঘোষণা করা হলে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দিনমজুর রাজবাড়ীতে আটকা পড়ে। শ্রমজীবী প্রায় শতাধীক মানুষ রাজবাড়ী শহরের রেলস্টেশন, রেলওয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, কলেজপাড়া আরএসকে স্কুল, রেল স্টেশন বট তলা, ফুল তলা এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এ সময় আটকা পড়া শ্রমিকদের থাকা ও খাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পরলে আমার সংগঠন ‘মানবিক রাজবাড়ী’ তাদের পাশে দাঁড়ায়। আমরা প্রথমদিন থেকেই তাদের খাবার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।

মোঃ আতাউর রহমান (৭০) নামে এক দিনমজুর জানান, তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দী থেকে রাজবাড়ীতে এসেছেন কৃষিকাজে জোন দিতে। লকডাউনে বাস, ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীতে আটকা পড়েন তিনি।

তিনি বলেন, ‘রাজবাড়ীর মানুষ খুব ভালো। সাংবাদিক (রবিউল) ভাই আমাগের প্রথমদিনতেই দেখতেছে । ওনার জন্যি আমরা দোয়া করি। আরও মেলা মানুষ আমাগের উপকার করতেছে। এহন আমাগেরে একখান দাবি, আগেরে থাহার এটা ব্যবস্থা কইরে দেওয়া লাগবি। আমরা ঝড়-বৃষ্টির মধ্যি এতগুলো লোক কী কষ্টের মধ্যি দিয়ে যাচ্ছি তা দেহার কেও কী নাই?

ওসমান প্রামানিক (৬০) এসেছেন বগুড়া জেলার দুফচাঁচিয়া থেকে। তিনি জানান, খাবারের তেমন কষ্ট হচ্ছে না। সাংবাদিক রবিউল প্রতিদিন খাবার ব্যবস্থা করছেন। এছাড়া, স্থানীয় হাজী বাড়ি ও সাবেক সিপিবি সভাপতি আবুল কালামসহ আরও অনেকেই তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে।

ওসমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, আমাদের কাছে ভোটার আইডি কার্ড আছে। আমার দেশে আমাদের থাকার একটু জায়গা হচ্ছে না। আমরাতও আর সারা জীবনের জন্য এইখানে থাকবো না, আমাদেরও বাড়ি-ঘর আছে। দেশে বাস-ট্রেন চালু হলেই চলে যাব’।

সাংবাদিক রবিউল বলেন, আমি খুবই চেষ্টা করে যাচ্ছি শ্রমজীবী মানুষগুলোর একটা থাকার ব্যবস্থা করার জন্য। এতগুলো মানুষ খোলা আকাশের নিচে কিভাবে ঘুমাবে বলেন? বাংলাদেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়ে বিশ্বে মানবতার দিষ্টান্ত দেখিয়েছে আর আমার নিজের দেশের মানুষ আজ বিপদের দিনে একটা থাকার জায়গা পাবে না?

রাজবাড়ীর বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ বলেছেন, সাংবাদিক রবিউল ও তার সেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক রাজবাড়ী সত্যি যেন মানবতার ফেড়ি আওয়ালা।