করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী উৎপাদনে বিনিয়োগ সহায়তা পাবেন উদ্যোক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৪-১৮ ১৬:১১:২৪


বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে করোনা প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও চিকিৎসা সামগ্রীর চাহিদা ও সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সামনে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে, বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জব (ইসিফোরজে) প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সহায়তা দেওয়া হবে।

রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি এমপি। বানিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়ান টিমবন ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। এতে সভাপতিত্ব করেন বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন।

বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি এমপি বলেন, কেবল স্থানীয় বাজারের জন্য নয়, বৈদেশিক বাজারে রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তারাও এ কর্মসূচীর মাধ্যমে উপকৃত হবেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ কর্মসূচী একটি মাইলস্টোন। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) উৎপাদন, ডায়াগনস্টিক ইক্যুইপমেন্ট ও ক্লিনিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট তৈরিতে যুক্ত উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ সহায়তা পাবেন। এ কর্মসূচীর নিরবচ্ছিন্ন বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সালমান ফজলুর রহমান এমপি বলেন, সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রপ্তানির বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান তৈরি করা, যা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। কভিড-১৯ এন্টারপ্রাইজ রেসপন্ড ফান্ডের (সিইআরএফ) মাধ্যমে এ ধরণের উদ্যোগ স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে উপকৃত হবে।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়ন টিমবন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এতে বিশ্বব্যাংকও এগিয়ে এসেছে। করোনা প্রতিরোধসামগ্রীর উৎপাদনে নতুন কর্মসূচীর মাধ্যমে ৫শ টির মত আবেদন এই কর্মসূচির সুবিধা পাবে।

ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর আমাদের ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ক্ষতি হতে পারে। তবে এতে আমরা ভীত নই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবো।

আমাদের মূল কাজ পন্য ও বাজার বহুমূখীকরণ করা। ইসিফোরজে প্রকল্পের মাধ্যমে তা সহজ হবে। নতুন এ কর্মসূচীতে যোগ্য আবেদনকারীদের মধ্যে ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

এ সময় নতুন কর্মসূচীর (উইন্ডো ফোর) বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রকল্পের এক্সপোর্ট রেডিনেস ফান্ড (ইআরএফ) কর্মসূচীর টিম লিডার ডেভ রাঙ্গানাইকালু। এতে বলা হয়, এ কর্মসূচীর জন্য বিনিয়োগ সহায়তা পরিমাণ হবে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিটি উদ্যোগে বিনিয়োগ সহায়তা পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৫ লাখ মার্কিন ডলার এবং সর্বনিম্ম ৫০ হাজার ডলার। প্রস্তাবিত এ কার্যক্রম ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে। রবিবার থেকেই এ কর্মসূচীর যোগ্য আবেদনকারীরা বিনিয়োগ সহায়তা জন্য আবেদন করতে পারছেন।

যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিপিই পন্য উৎপাদন করে স্থানীয় বাজার ও রপ্তানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এ অনুদান। দেশীয় ও বৈদেশিক প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে কোন উদ্যোক্তা যদি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতা সক্ষম হয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ এমপিপিই সামগ্রী উৎপাদন করতে সক্ষম হন, তারা এ বিনিয়োগ সহায়তা জন্য বিবেচিত হবেন।

যেসব উদ্ভাবনী ও মেধাসম্পন্ন উদ্যোক্তা নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মেডিক্যাল ও পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (এমপিপিই) উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছেন, তারা এ বিনিয়োগ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইসিফোরজে প্রকল্পের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইসিফোরজে নামক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বানিজ্য মন্ত্রণালয়। মূলত চারটি খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগী সক্ষম করে গড়ে তুলতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে করোনা প্রতিরোধী সামগ্রী তৈরির সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে, যা সিইআরএফ নামে পরিচিত।

অনুদান আবেদনকারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিভুক্ত হলে এ প্রকল্প থেকে ৬০ শতাংশ বিনিয়োগ সহায়তা পাবেন আর আবেদনকারীর অংশগ্রহণ থাকবে ৪০ শতাংশ। এছাড়া বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সহায়তা হবে ৫০ শতাংশ।

যেসব পন্য ও সেবার ক্ষেত্রে এ বিনিয়োগ সহায়তা প্রযোজ্য হবে তা হলো পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), ডায়াগনোস্টিক ইকুইপমেন্ট, ক্লিনিক্যাল কেয়ার ইকুইপমেন্ট। এমপিপিই পন্যের ডিজাইন ও কারিগরি মানের উন্নয়ন, প্যাকেজিং ও বৈচিত্র্য আনয়ন এবং ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন প্রণয়ন, এমপিপিই পণ্যের সহায়তামূলক কর্মকান্ড যেমন, গবেষণা, পন্য উন্নয়ন, টেস্টিং ও সার্টিফিকেশন এবং নতুন উদ্ভাবন।