লকডাউন ইস্যূতে চাহিদা নেই দেশী মুড়ির: হতাশ ব্যবসায়ীরা
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-২১ ১২:৩১:৩৯
বছর ঘুরে রমজান মানেই ইফতার, আর ইফতারে মুড়িতো থাকবেই। কিন্তু এবারের রমজানে করোনার কারণে মানিকগঞ্জে মুড়ির চাহিদা একদমই নেই। উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা দু’য়ের মাঝেই অনেকটা হতাশা কাজ করছে।
মানিকগঞ্জ সদরের নবগ্রাম ইউনিয়নের সরপাই গ্রাম। যেখানে একসময় মুড়ি ভাজার গন্ধে চারপাশ ভরে যেতো সেখানে এখন আর সেই গন্ধ পাওয়া যায় না। অনেকা পার্বণের আগমনী ভাব ছিল। কিন্তু যান্ত্রীকরনের ফলে দেশীয় পদ্ধতিতে মুড়ি তৈরির আগ্রহ এ এলাকায় তেমন একটা দেখা যায় না। সেই সাথে দামের বিষয়টি তো রয়েই গেছে।
আমাগো বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দ্যাখতাছি আমার বাপ-ভায়েরা এই মুড়ির ব্যাবসা করে আসতাছে। প্রতি বছরই রমজান আসলে পুরো গ্রাম ধইরা প্রত্যেক বাড়িতে মুড়ি ভাজতো। কিন্তু এখন মেলের (মিল) মুড়ি আসাতে হাতে ভাজা মুড়ি কম চলে। আমাদের এলাকায় এখন কেবল আমার মা-ই মুড়ি ভাজে বলে জানায় সরপাই গ্রামের আইভী বেগম (৩৫)।
এরই মধ্যে রমজান শুরু হয়ে গেছে কিন্তু গ্রাহকদের মুড়ির প্রতি তেমন একটা চাহিদা দেখা যাচ্ছে না। মুদি দোকানেও লক্ষ করে দেখা যায় নি গ্রাহক সাধারণ। চলমান লকডাউনে মুড়ির চাহিদা নেই বললেই চলে।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের মুদি দোকানি কার্তিক চন্দ্র শীল বলেন, আগে দেশি মুড়ির চাহিদা ছিল কিন্তু এখন করোনার কারণে চাহিদা কম। মিলের মুড়ি সত্তর টাকা কেজি আর দেশি মুড়ির দাম একশ চল্লিশ টাকা কেজি দামের কারণে মানুষ দেশী মুড়ি নেয়না। টার্গেট পুরন হইবো না করোনার কারনে।আগে ভালো বেচতাম। ঢাকা থেকেও লোক আসতো। এখন তো বেচাকেনাই নাই করোনার কারনে, লোকজন আসে না।
আগে যেখানে দৈনিক দেড়শ থেকে তিনশ কেজি মুড়ি বিক্রি করতাম এখন পঞ্চাশ কেজিও বিক্রি করতে পারিনা।
বিশ-ত্রিশ বছর ধরে মুড়ি বিক্রি করি কিন্তু এবারের মতো খারাপ অবস্থা আগে হয় নাই। এই মুড়ি সাধারণত ঢাকার লোকেই নেয়। করোনার কারণে তো লোক আসতেই পারে নাই।
দেশি মুড়ির চাহিদা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কার্তিক জানান, মিলের মুড়ি যেখানে দৈনিক পাঁচ’শ বস্তা ভাজা যায় সেখানে দেশি মুড়ি ভাজতে পারে বিশ থেকে ত্রিশ কেজি। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচটাও লক্ষণীয়।
কালের বিবর্তনে একদিন হয়তো দেশি মুড়ির চাহিদা আর এদেশে থাকবে না। স্বাদের গুনগত মান নয় ভোক্তা চায় সুলভ মুল্যের পণ্য। তবু একদিন যেখানে মুড়ি ভাজার উষ্ণ গন্ধে পুরো গ্রাম থাকতো মুখরিত সেখানে এখন আর সে দৃশ্য তেমন দেখা যায় না। পাইকারীদের সমাগম নেই বললেই চলে।
মানিকগঞ্জের নবগ্রাম ইউনিয়নের সরপাই এলাকার সখিনা বেগম বলেন, আমার বিয়্যা হইয়ে আসার পর থ্যাইকেই আমরা মুড়ি ভাজার কাজ কইরে আসতাছি। আগে এইখ্যানে সবাই মুড়ি ভাজতো। রোজার সময় ত্রিশ দিনের ত্রিশ দিনই এক বস্তা কইরা ভাজতাম। কিন্তু মিলের মুড়ি আসনে (আসায়) এই মুড়ির চাহিদ্যা কইম্যা গেছে। সবাই মুড়ি ভাজা বাদ দিছে। আমি আর বাদ দেই নাই। যে পরিমাণ কাজ করি সে পরিমাণ চাহিদা নাই। মজুরিও পাইনা।
তিনি বলেন, আমরা তো কিস্তি তুইল্যা ধান আনি। এখন তো কিস্তিও তুলতে পারুম না, ধানও আনতে পারুম না। করোনায় তো আমাগো বসায় দিছে।
একাই দুই দিনে সখিনা দুইমণ মুড়ি ভাজতে পারেন। কিন্তু মজুরি পড়ে মাত্র আড়াইশ টাকার মতো। পুরো রমজান ধরে হয়তো ভাজতে পারবেন পনেরো থেকে ষোল মণ ধান। কিন্তু চলমান লকডাউনের সময়ে ধানের দামের সাথে মিল রেখে মুড়ির উৎপাদন খরচ তোলাই এখন ভাবার বিষয়।