অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবেলা

ধনীদের ওপর কর বাড়াচ্ছেন বাইডেন

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৪ ১৬:২৫:৩৮


ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য নিরসনে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মার্কিনদের মধ্যে এ বৈষম্য মোকাবেলায় নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করতে চলেছেন তিনি। আগামী আর্থিক প্যাকেজে ঘোষণা করতে যাওয়া এ পদক্ষেপে ধনীদের ওপর ঐতিহাসিক কর বাড়ানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাইডেন শিশুদের যত্ন, সর্বজনীন শিক্ষা ও শ্রমিকদের ছুটিকালীন বেতন প্রদানের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে চাইছেন। খবর ব্লমবার্গ ও রয়টার্স।

নতুন এ করহারে ধনীদের ওপর মূলধন থেকে আয়ের ওপর কর দ্বিগুণ হচ্ছে। মূলধন মুনাফার ওপর বর্তমানের ২০ শতাংশ থেকে এ করহার ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে ওবামাকেয়ার তহবিলের জন্য অতিরিক্ত ৩ দশমিক ৮ শতাংশ ফেডারেল করহার নির্ধারণ করা হচ্ছে। শুধু যারা বার্ষিক ১০ লাখ ডলারের বেশি আয় করেন, তাদের ক্ষেত্রেই এ করহার প্রযোজ্য হবে। তবে অঙ্গরাজ্যভেদে এ করহার আলাদা এবং কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে এ করহার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেমন অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল মূলধন মুনাফার কর মিলে এটি নিউইয়র্কে ৫২ দশমিক ২২ শতাংশ এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে।

যদিও এই অতিরিক্ত করহার খুব বেশি মার্কিন নাগরিককে প্রভাবিত করবে না। ২০১৮ সালের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা করের রিটার্নের তথ্য অনুসারে, করদাতাদের মধ্যে কেবল শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ মার্কিন সামগ্রিকভাবে ১০ লাখ ডলারের বেশি আয় করার কথা জানিয়েছেন।

কর আরোপের পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হলেও এরই মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। এ খবরের পর এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকটি শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ পতন হয়েছে। অর্থনীতি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের মনোভাবের সূচক টেন ইয়ার ট্রেজারি ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশে নেমেছে।

অনেক দিন আগে থেকেই ধনী ব্যক্তিদের মূলধন মুনাফা কর ও আয়করের হার সমান করার বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন বাইডেন। তার ভাষ্য, মধ্যবিত্ত শ্রমিকদের তুলনায় ধনী অনেককেই কম হারের কর দিতে হয়, যা অন্যায্য। বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মূলধন মুনাফা কর বাড়ানোর বিষয় হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছিলেন, আমরা বিষয়টি চূড়ান্ত করার কাজ করছি। আসন্ন ‘আমেরিকান পরিবার পরিকল্পনা’ নামের এ সামাজিক ব্যয় তহবিলের জন্য কর বাড়ানোর প্রস্তাবটি বাইডেন আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন অন্য যে ব্যবস্থাগুলো নিয়ে আলোচনা করছে, সেগুলোর মধ্যে ধনী ব্যক্তিদের ওপর সম্পদ কর বাড়ানোর বিষয়টিও রয়েছে। বাইডেন জানিয়েছেন, বার্ষিক ৪ লাখ ডলারের বেশি আয় করা মার্কিনরা আরো বেশি কর দিতে পারেন। হোয়াইট হাউজ এরই মধ্যে করপোরেট কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে, যা দিয়ে ২ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো কেন্দ্রিক ‘আমেরিকান জবস প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করা হবে।

তবে বাইডেনের এ পরিকল্পনা রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। এমনকি ডেমোক্র্যাটরা এ পরিকল্পনা সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করতে না পারেন। রিপাবলিকানরা মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রয়োগ করা ২০১৭ সালের কর কমানোর বিষয়টি অব্যাহত রাখতে জোর দিচ্ছেন। তাদের যুক্তি, বর্তমানের মূলধন মুনাফা কাঠামোটি অর্থ সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করছে।

এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করে সিনেট ফাইন্যান্স কমিটির শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান লোয়া অঙ্গরাজ্যের চাক গ্রাসলি বলেন, এটি বিনিয়োগের পরিমাণ কমিয়ে দেবে এবং বেকারত্ব সৃষ্টি করতে চলেছে।

২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় কংগ্রেসে এক যৌথ ভাষণে বাইডেন এ আমেরিকান পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। এটি পাস হলে ছয় থেকে আট বছর বয়সী শিশুদের জন্য তাদের অবিভাবকদের প্রতি মাসে ২৫০ বা ৩০০ ডলার করে সহায়তা দেয়া হবে।