মানিকগঞ্জে লকডাউনে ভাসমান মানুষের পাশে কেউ নেই
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৪ ১৭:৫৮:০০
বৈশ্বিক মহামারি কোভিট-১৯ এর সংক্রমণে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সরকার তথা জনসাধারণ অনেকটাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পেরেছিলো গত ২০২০ সালে।
কিন্তু হঠাৎ করেই এবছর করোনার সেকেন্ড ওয়েব কঠিন রুপে হানা দেয়া শুরু করে। সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় লকডাউন ও সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত। গত ৪ এপ্রিল থেকে লকডাউনের সিদ্ধান্ত থাকলেও মুলত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশ ব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন পালন করা হচ্ছে।
এদিকে লকডাউনের পূর্বে অনেকেই তাদের সুবিধা মতো নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেছে। ফলে শহরাঞ্চলের প্রায় সব জায়গা এখন ফাঁকা। তবে লকডাউনে সবচেয়ে বড় সমস্যায় রয়েছে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আটকে পড়া ভাসমান লোকজন। সংসারের সুখের জন্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কাজের সন্ধানে আসা এই সব দিন মজুরেরা চলমান লকডাউনে কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন যাপন। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড টার্মিনালের মেঝেতে রাত হলেই দেখা যায় অসংখ্য মানুষের নিশ্চুপ আক্ষেপের আলোকচিত্র।
গতবারের লকডাউনে তো কিছু পায়েছি। কিন্তু এবার তো কিছু সাহায্য সহযোগীতা দেখছি না। আমাদেরকে কিছু সাহায্য দিলে আমাগের ভালো হতো। ক্লান্ত অবসাদ নিয়ে কথাগুলো বললেন রাজশাহী থেকে আসা ভাসমান শ্রমিক নুরুল ইসলাম।
এরই মধ্যে কাজ করতে এসে আটকা পড়ে গেছেন ময়মনসিংহের এক কৃষক। সাতদিনের কথা বলে গৃহস্ত তাকে নিয়ে গেলেও চলমান লকডাউনের কারণে তিনদিন কাজ করার পর ছুটি দিয়ে দেয়। ফলে আটকে পরে এই ভাসমান কৃষক।
এসময় তিনি বলেন, লকডাউনে আটকে গেলাম। গতবার লকডাউনে এখানেই ছিলাম। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। কাজ ছিল না কিন্তু দিনে চার থেকে পাঁচ বার খাবার পাইছি। অনেক কিছুই দিছে আমাদের। কিন্তু এবার সেরকম ভাবে পাচ্ছি না। তবে পুলিশ চারদিন এবং মাদ্রাসা থেকে তিন দিন ইফতার দিয়ে গেছে। এছাড়া এখনো পর্যন্ত আর কিছুই পাইনি।
এদেরকে ইফতার হিসেবে দেয়া হয়েছে শুধু খিচুড়ি। লকডাউনের ঘোষণা তো আগেই দেয়া হয়েছিল তাহলে তখন কেন আগেই চলে যাননি (?) এমন প্রশ্নের উত্তরে ভাসমান শ্রমিকরা বলছেন দুই হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাড়ী যাবো কিভাবে? আমাদের তো কাজই নাই।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আরেক ভাসমান শ্রমিক বললেন গতবার লকডাউনে গাবতলী ছিলাম। তখন সেখানে সাহায্য পাইছিলাম। এখানে মানিকগঞ্জে বিকালে পুলিশ এসে ইফতারি হিসেবে খিচুড়ি দেয়। সেই খাইয়ে সারাদিন পরে থাকি। কামকাইজ নাই। আমাদের খুবই কঠিন অবস্থা। যাও বাড়ী যাবো গাড়ীতে, ট্রাকে ম্যালা ভাড়া চায়। কি করবো ভাইব্যা পাচ্ছি না।
স্বামী হাজতে আর গতবছর সন্তানের মৃত্যুর স্মৃতি আগলে মানিকগঞ্জ বাস টার্মিনালেই থাকেন এক বিশোর্ধ নারী। শত কস্টেও গত লকডাউনে যা সাহায্য পেয়েছেন তা অন্যের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। জানালেন অনেক কিছুই পেয়েছে গত লকডাউনে। এমনকি কম্বলও পেয়েছিলেন। এবার এখনো পর্যন্ত য প্যাকেট খাবার তার ভাগ্যে জুটেছে তা তিনি অন্যকে দিয়ে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানালেন তিনি খিচুড়ি খাননা। হয়তো অনাহারী হয়েই শুয়ে আছেন টার্মিনালের বারান্দার এককোনে মশারি টানিয়ে। অথচ কথা গুলো বলার সময় মুখে ছিল হাসি জড়ানো।
এদিকে চুয়াডাঙ্গার এনামুল হক বলেন, গতবছর অনেক কিছুই পাইছিলাম। চিড়া,গুড়, সাবান, টিস্যু ছাড়াও অনেক কিছু পাইছি। এবার শুধু পুলিশ চারদিন খিচুড়ি দিছে আর মাদ্রাসা থেকে কয়দিন খাবার দিছে। এছাড়া আমাদের জন্য অন্য কেউ সাহায্য লিয়ে আসেনি।
সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমরা যারা ভাসমান কৃষক তাদেরকে এই লকডাউনে একটু সাহায্য সহযোগীতা করলে ভালো হতো।
গতবারের লকডাউনে মৃত্যু ও সনাক্তের হার কম হলেও যে ভাবে চারিদিক থেকে ভাসমান লোকজনকে দেয়া হয়েছে ব্যাপক সাহায্য ও সহযোগীতা। এবার লকডাউনে মৃত্যুর মিছিল সেইসাথে সনাক্তের হার বাড়লেও সাহায্যের হাত যেন ক্রমশই ছোট হয়ে এসেছে। রমজানের এই সময়টাতে অন্তঃত সমাজের বিত্তবান ও সেবা মুলক প্রতিষ্ঠান গুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানান ভাসমান লোকজন।