প্রজ্ঞা-আত্মা’র বাজেট প্রস্তাবে তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৪-৩০ ১২:৩৩:২০


আসন্ন বাজেটে সিগারেটসহ সব তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ‘প্রজ্ঞা’ (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও দাম সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে সংগঠন দুটি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দাবি বাস্তবায়ন করা হলে ৩ লাখ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু রোধ হবে। এছাড়া সিগারেট থেকে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আসন্ন বাজেটে তামাকের দাম ও কর বাড়ানোর এই প্রস্তাব আমি সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি। সরকারকে মানুষের কল্যাণের বিষয়টি দেখতে হবে। আমাদের সংবিধানেও তাই রয়েছে।কিন্তু সরকার তামাক থেকে শুধু রাজস্ব আয়ের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়। অথচ মানুষের ওপর এর অভিঘাত কী সেটা মূলায়ন করে না।

বাসসের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমাদের পাশের দেশ শ্রীলঙ্কার উদাহরণ কাজে লাগিয়ে আমরা তামাকের কর ও দাম বাড়াতে পারি। একে অপরের শিক্ষা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এর পাশাপাশি আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকের ওপর সুনির্দিষ্ট হারে কর বসাতে হবে, এতে সরকার লাভবান হবে। এই করোনাকে ঘিরে একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে, তামাকের স্বাস্থ্যক্ষতি বিষয়ে ব্যাপক প্রচরণা চালাতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, আমাদের তামাক-কর কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন দরকার। এজন্য তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে হবে। বিশেষ করে নিম্নস্তরের সিগারেটের প্রস্তাবিত কর ও দাম প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং নিম্নআয়ের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। কারণ সিগারেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭২ শতাংশ নিম্নস্তরের সিগারেট ব্যবহার করেন।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা আশা করছি এনবিআর এই বাজেট প্রস্তাব গ্রহণ করবে। তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, তামাক ব্যবহার হ্রাস পাবে এবং তরুণরা তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে।

আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে- ১. সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক আরোপ করা; নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১০ টাকা নির্ধারণ করে ৭১.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক করা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

২. মধ্যমেয়াদে (২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬) সিগারেটের ব্রান্ডসমূহের মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনা।

৩. ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এর ফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫ শতাংশ।

৪. প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এর ফলে জর্দা ও গুলের ওপর সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০ শতাংশ।

৫. সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।

সানবিডি/এএ