লবণের কেজি মাত্র ৩ টাকা: হতাশায় চাষিরা
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৯ ১২:৩৪:৩৪
সব ধরনের লবণ আমদানি বন্ধ থাকার পরেও লবণের দাম নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন উপকূলের হাজার হাজার চাষি। বুধবার (২৮ এপ্রিল) প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হয়েছে মাত্র তিন টাকা।
বাঁশখালী সনুয়ার লবণ চাষি বেলাল উদ্দিন জানান, গতকাল লবণ বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ১৫০ টাকা গড়ে প্রতি মণ লবণে ধোলাই খরচ পড়ে প্রায় ৩০ টাকা। সে হিসাবে গতকাল প্রতি কেজি লবণ বিক্রি করে চাষিরা পেয়েছেন তিন টাকা। অপর দিকে প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে গড়ে খরচ হয় ২৪০ থেকে ২৫০ টাকার উপরে (প্রতি কেজি ছয় টাকা ২৫ পয়সা)। সে হিসাবে প্রতি কেজি লবণে চাষিরা লোকসান গুনছেন তিন টাকা ২৫ পয়সা করে। চলতি মৌসুমে ২২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ও চাহিদা নিয়ে মাঠে নামেন চাষিরা।
বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানিয়েছেন, চলতি লবণ মৌসুমের শুরু থেকে গত সপ্তাহের হিসাব অনুযায়ী (২৩ এপ্রিল পর্যন্ত) লবণ উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৩ লাখ ২৫ হাজার ১৫০ টন। এদিকে গতকাল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় উৎপাদিত লবণ (অপরিশোধিত বা ক্রুড) প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ধোলাই খরচসহ মাত্র ১৬০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা।
এদিকে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের শেষ সময় আগামী মে মাসের ১৫ তারিখ। সে হিসাবে লবণ উৎপাদনের জন্য রয়েছে আর মাত্র ১৫ দিন বা দুই সপ্তাহ।
সে হিসাবে প্রতি সপ্তাহে গড়ে দেড় লাখ টন লবণ উৎপাদন হিসাব করলেও মৌসুমের শেষ সময় পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে মজুদ তিন লাখ ৪৮ হাজার টন (গত বছরের মওজুদ) এবং চলতি মৌসুমে আমদানিকৃত প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টন লবণ ও চলতি মৌসুমের বাকি তিন সপ্তাহের উৎপাদিত লবণের ওপর ভরসা করা হচ্ছে দেশের চলতি বছরের লবণ চাহিদার পূরণের জন্য।
জানা গেছে, প্রতি বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি (১৫ নভেম্বর থেকে) সময়ে লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হয় আর শেষ হয় মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে। লবণ উৎপাদন নভেম্বরে শুরু হলেও মার্চ এপ্রিল মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বেশির ভাগ লবণ উৎপাদন হয়। সে হিসাবে আগামী ৩ সপ্তাহে (আবহাওয়া ভালো থাকলে) কমপক্ষে আরো সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টন লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে অতিরিক্ত সোডিয়াম ক্লোরাইড (ভোজ্য লবণ) আমদানি করার কারণে দেশে উৎপাদিত লবণের মূল্যে ধস নামা শুরু করে।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির বলেন, সরকার লবণ শিল্প রক্ষায় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা যুগান্তকারী বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন এই সিদ্ধান্তের ফলে আর কেউ সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে অতিরিক্ত লাখ লাখ টন সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করতে পারবে না। তিনি বলেন, যদি বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে যারা লবণ শিল্পের সাথে জড়িত তাদের মাধ্যমে লবণ আমদানি করা উচিত।
সানবিডি/এএ