খাদ্য সংকটের ফসলি জমিতে হনুমানের হানা

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৯ ১৬:০১:৫০


যশোরের কেশবপুরে করোনাকালীন সময়ে খাদ্য সংকটে কালোমুখো হনুমান হানা দিচ্ছে ফসলের ক্ষেতে। এছাড়া খাদ্যের সন্ধানে তারা দলছুটহয়ে এলাকা ছেড়েও অন্যত্র চলে যাচ্ছে। সরকারিভাবে কালো মুখো হনুমানের জন্য যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

বিলুপ্ত প্রায় এ হনুমানের পরিচর্যা ও সংরক্ষণে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন কেশবপুরের জনসাধারণ। উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে কয়েকশ বছর ধরে কেশবপুর সদর পার্শ্ববর্তী ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৬শ বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান বসবাস করছে।

বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চত্তর, হাসপাতাল এলাকা , পাইলট স্কুল এলাকা, ভোগতীনরেন্দ্রপুর, মধ্যকুল, রামচন্দ্রপুর,ব্রহ্মকাটি, থানা চত্তরসহ ১২ টি স্পটে তাদের বিচরণ রয়েছে। বন বিভাগ থেকে প্রতিদিন বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমানের জন্য ৩৫ কেজি পাকা কলা, ৪ কেজি পাউরটি ও ৪ কেজি বাদাম দেওয়া হয়। তবে এত সংখ্যক হনুমানের বিপরীতে এ খাবার সকলের মাঝে পৌছায় না। বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা কেশবপুরে আসলে ও এলাকার মানুষ কমবেশী তাদের খাবার দেয়।

এদিকে, করোনাকালীন সময়ে কেশবপুরে পর্যটকের আগমন না থাকায় ও মানুষের জীবন যাত্রা থমকে যাওয়ায় কালোমুখো হনুমানগুলো খাদ্য সংকটে পড়েছে। এ কারণে তারা ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য হানা দিচ্ছে ফসলের ক্ষেতে, ফলফলাদির গাছসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে। এছাড়া দলছুট হয়ে কালোমুখো হনুমান খুলনা ও যশোরের চৌগাছা উপজেলা এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতী এলাকার কামুজ্জামান কামরুল বলেন, তার দেড় বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। গত কাল বুধবার (২৮ এপ্রিল) সকালে একদল কালোমুখো হনুমান তার ওই ক্ষেতে এসে প্রায় দেড় কাঠা জমির পাটের কচি পাতা খেয়ে ফেলে। এছাড়া পাট ক্ষেতে ছোটাছুটি করে ফসলের বেশ ক্ষতি করেছে। উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বেগমপুর গ্রামের মুরাদ হোসেন জানান, কেশবপুর শহর থেকে ক্ষুধার্ত একটি কালোমুখো হনুমান গত মঙ্গলবার বিকেলে তাদের এলাকায় আসে। ক্ষুধার্ত ওই হনুমানটিকে বিভিন্ন ফলমূল খেতে দেওয়া হয়।প্রায়ই এভাবে ক্ষুধার্ত হনুমান তাদের এলাকায় এসে মানুষের বাড়ি ঘরসহ দোকানপাটে হানা দেয়। কথা হয় কেশবপুরে কাজে আসা খুলনা শহরে বসবাসকারী মোক্তার আলীর সাথে, তিনি জানান সম্প্রতি কেশবপুর থেকে দলছুট হয়ে ২ টি কালোমুখো হনুমান তাদের বাসার ছাদে আসে। এসময় তাদেরকে শসা ও কলা খেতে দেওয়া হয়। পরে তারা অন্যত্র চলে গেছে।

খাদ্য বিতরণকারী আতিয়ার রহমান বলেন, প্রতিদিন সকালে যে সকল এলাকায় কালোমুখো হনুমান বিচরণ করে সেখানে প্রতিদিন ভ্যানে করে গিয়ে কলা, পাউরুটি, বাদাম দিয়ে আসি। কিন্তু কালোমুখো হনুমানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যে খাদ্যে দেওয়া হয় তাতে তাদের ক্ষুধা নিবারণ হচ্ছে না। এব্যাপরে উপজেলা বন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্তমানে কেশবপুরে হনুমানের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬০০ হয়েছে। যে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে তা অপ্রতুল। এ কারণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট এদের খাদ্য বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।