রাজবাড়ীতে থামছে না অবৈধভাবে পুকুর খনন

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২১-০৪-৩০ ১৪:২৫:৪৪


রাজবাড়ীতে থামছে না অবৈধ পুকুর খনন। অভিযান পরিচালিত হলেও কোন লাভ হচ্ছেনা। প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে এলাকা ভিত্তিক সিন্ডিকেটচক্র বর্ষা পরবর্তীতে ও বর্তমানে অতিমাত্রায় খরা হওয়ায় আবারও মেতে ওঠেছে ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খননে।

তারা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এলাকার কিছু দালালদের অর্থের বিনিময়ে হাত করে প্রকাশ্য দিবালোকেই পুকুর খননের কার্যক্রম শুরু করছে। এমনি পুকুর খননের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে জেলার সর্বত্র।

২৯ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) জেলার পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুরে কালুখালি উপজেলার বাসিন্দা মাটির দালাল শমসেরের তত্ত্বাবধানে ফসলী জমিতে অবৈধভাবে দীঘি খনন করা হচ্ছে। এই রকম দৃশ্য পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের সরিষা গ্রাম সহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও জেলার সদর, গোয়ালন্দ, বালিয়াকান্দি ও কালুখালি উপজেলায় ও হরহামেশা চলছে এই পুকুর কাটার নামে ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি বাণিজ্য।

বিভিন্ন সময় অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন প্রশাসন। এই সকল অভিযানে ভেকুর যন্ত্রাংশ নষ্ট করা হলেও লাভ হয়নি মোটেও। নতুন করে ভেকু এনে আবারও দীঘি খনন কাজ শুরু করা হয় সেখানে। এদিকে এই পুকুর খননের বিরুদ্ধে এবং এলাকায় জলাবদ্ধতার হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে প্রতিটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিনিয়তই আসছে অভিযোগ।

পরিবেশ আইন অমান্য করে কৃষি জমির (টপসয়েল) ও পুকুর খননের মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। এতে কতিপয় প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। আবার এই মাটি ট্রাকে পরিবহন করায় রাজবাড়ীর পুনঃ নির্মাণাধীন নতুন আঞ্চলিক মহাসড়ক সহ প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তাও ভেঙেচুড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষি জমির মাটি কাটা দন্ডনীয় অপরাধ। আর জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে পুকুর খনন করাও দণ্ডনীয় অপরাধ। পরিবেশ আইন অনুয়ায়ী কৃষি জমির মাটিকাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্য দিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া, বাহাদুরপুর, হাবাসপুর, সরিষা এলাকায় কৃষি জমির মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। আবার খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে কাঁকড়া নামীয় এসব ট্রাকের অবাধ চলাচলের কারণে সদ্য নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙেচুড়ে একাকার হয়ে গেছে।

এছাড়া ওই সব ট্রাক থেকে মাটি পড়ে ধুলোবালির স্তুপ জমে যাওয়ায় ওই সব রাস্তা দিয়ে যানচলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কির্ত্তনিয়া বলেন, এই সমস্যাটি পাংশায় চরম আকার ধারন করেছে। বিষয়টি উপজেলা সমন্ময় কমিটির সভায় তুলে ধরে একটি রেজুলেশন করা হলেও বাস্তবে কোন কাজ হচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এসকল কারণে প্রতি মৌসুমে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার উপরে। বর্ষার সময় জলাবদ্ধতার কারণ পানি নিষ্কষনের বিভিন্ন ব্রিজ কালভাটের মুখ বন্ধ করে সেখানে মাছ চাষ করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ জন্য পুকুর খনন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সচেতন মহলের নানা উদ্যোগের সত্বেও তার তোয়াক্কা করছেন না স্থানীয় কিছু স্বার্থন্মেষী মহল। তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এলাকার হাজার হাজার কৃষকের পেটে লাথি মারতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। এভাবে দীঘি খনন করা হলে ফসল উৎপাদনসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিতসহ ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। বর্ষার পানি সহজে নামবে না। ফলে বাড়িঘর ও ফসলাদি ডুবে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হব।

এ বিষয়ে কয়েকজন দীঘি খননকারীর সাথে কথা হলে তারা ফসলী জমির কথা অস্বীকার করে বলেন, জমিগুলো সারা বছর কুচুরীপনায় ভরে অনাবাদী পড়ে থাকে। তাই সেখানে পুকুর খননের উদ্যোগ নিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী বলেন, কোনভাবেই পাংশার যে কোন এলাকায় আর পুকুর খনন করতে দেয়া হবে না। এব্যাপারে খবর পাওয়া মাত্রই অতি দ্রুত সেখানে গিয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুকুর খননকারী যেই হোক তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।