রংপুর মেডিকেলে বিনা চিকিৎসায় ২১ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২১-০৫-১৭ ১১:৪৩:০০


রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে বৃহস্পতিবার থেকে ঈদের পরের দিন শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালে হাতেগনা চিকিৎস নার্স, আয়া ছাড়া হাসপাতালে বেশিরভাগ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় গত তিন দিনে ২১ রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে।

শনিবার হাসপাতালে জরুরী বিভাগ সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে রোগীর স্বজনদেও সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। করোনা সংক্রমনের পর থেকে বিভাগীয় প্রধান সহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাসপাতালে খুব একটা আসেন না। রেজিষ্টার সহকারী রেজিষ্টার আর ইন্টার্ন ডাক্তার দিয়ে চলছে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা।

ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও তাদের কোন চিকিৎসা হচ্ছেনা। চিকিৎসক, নার্স আয়া কেউই নেই। চুক্তিভিত্তিক কিছু কর্মচারী আছেন তারাই নার্সের দায়িত্ব পালন করছেন।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ জরুরী বিভাগে রোগী নিয়ে এসে ভর্তি হতে ২শ টাকা আর ট্রেচারে করে রোগীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে দিতে হচ্ছে দেড় থেকে দুশ টাকা। ওয়ার্ডে আনার পর নার্স এসে স্যালাইন যাবতিয় ঔষধ বাহির থেকে কিনে আনতে বলে। প্যারসিটামল পর্যন্ত কিনে আনতে হচ্ছে বাহির থেকে।

ওয়ার্ডগুলোতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের কাউকেই পাওয়া যাচ্ছেনা। সব গুলো কক্ষে চেয়ার টেবিল ফাঁকা পড়ে আছে। বিভাগীয় প্রধান সহ চিকিৎসকদের রুমে তালা ঝুলছে।

মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে কাঁদছেন তার মেয়ে আনোয়ারা বেগম। তিনি জানান, ঈদের আগের দিন থেকে কোন ডাক্তার আসেনাই। তার বাবা গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কি করবেন বুঝতে পারছেননা। নার্স ঈদের আগের দিন কিছু পরীক্ষা করতে বলেছেন অনেক কষ্টে বাইরে ডায়গনষ্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করে রিপোর্ট নিয়ে অপেক্ষা করছেন কাকে দেখাবেন। কাঁদতে কাঁদতে আনোয়ারা বেগম জানান, তার বাবার যে অবস্থা এখন বেঁচে থাকায় দায়।

সার্জারী বিভাগে চিকিৎসা নিতে বাবা রইছ উদ্দিকে সঙ্গে নিয়ে লালমনিহাট জেলার মোগলহাটের সাহাদত হোসেন। তিনি জানান, তার বাবার পায়ে আঘাত জনিত কারনে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিন ধরে ডাক্তারা নার্স কেউ আসেনা। গজ ব্যান্ডেজ দেখিয়ে বললেন তিনি নিজেই প্রতিদিন তার বাবার ড্রেসিং করে দিচ্ছেন। চিকিৎসক না আসলে বাবাকে এখানে রেখে লাভকি।

গাইনী ওয়ার্ডের আবস্থা করুন। সেখানে শতাধিক রোগী অবস্থান করছে। কেউ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। কেই সন্তান প্রসবের অপেক্ষায় আছেন। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, ঈদের দুদিন আগে থেকে কোন চিকিৎসক নার্স কেউ আসেনা। চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া দুজন নার্স তাদের খোজ নিয়েছেন কিন্তু ডাক্তারের কোন খবর নেই।

রমেক জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা গেল বিভিন্ন স্থান থেকে এ্যাম্বুলেন্সে, ভ্যানে, অটো রিক্সায় রোগীরা আসছেন। তাদের জরুরী বিভাগে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পর একজন কর্মচারী এসে নাম ঠিকানা লিখে ভর্তি সিলিপ দিয়ে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ইন্টার্ন ডাক্তার সৌরভ সাহার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

রোগীর স্বজনরা অভিযোগ কওে বলেন, ভর্তি হতে জরুরী বিভাগের কর্মচারীরা অনেকটা জোর করে রোগীপ্রতি প্রতি দুশ টাকা নিচ্ছেন । টাকা দিলে তাড়াতাড়ি ভর্তি স্লিপ দিচ্ছেন আর না দিলে ঘন্টার পর ঘন্টা রোগীকে দাড়করিয়ে রাখছেন। তবে জরুরী বিভাগে কর্মরত কর্মচারীরা এসব অভিযোগ অস্বিকার করে দ্রুত সটকে পরেন। জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ইন্টার্ন ডা, সৌরভ সাহা জানান, এক্সিডেন্ট সহ যেসব মুমুর্ষ রোগী আসছেন তাদের দেখভাল করতে তাকে হিমসীম খেতে হচ্ছে। তার পরেও দায়িত্ব পালন করছেন। রবিবার সকাল থেকে ইন্টার্ন ডাক্তার ও নার্সদের ওয়ার্ড গুলোতে দেখা গেছে।

এব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক রেজাউল জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স আয়া তারা সাধ্যমতো কাজ করছেন বলে জানান তিনি। জরুরী বিভাগের অবস্থাপনা দুর্নীতির বিষয়টি দেখবেন বলে জানান তিনি।