আজ শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৫-১৭ ১২:১০:০৬


আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছরের নির্বাসনজীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজটি সেদিন বিকেলে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তত্কালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এ সময় সারা দেশ থেকে আসা লাখো মানুষ তাঁকে স্বাগত জানায়, ভালোবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

করোনা মহামারির কারণে আজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যা করা হয়। তখন বিদেশে অবস্থানের কারণে ঘাতকদের হাত থেকে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ওই সময় স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে থাকা শেখ হাসিনা পরে ভারতে আশ্রয় নেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশকে স্বাধীনতাবিরোধীদের ধারায় নিয়ে যেতে ঘাতকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। দুর্যোগের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভক্ত হয়ে পড়েন। পরে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এরপর তাঁর দেশে ফেরা ঠেকাতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তত্কালীন জিয়াউর রহমানের সরকার। সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিনটিতে রাজধানী ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিল আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলানগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সেদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটে আসে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় রাজধানীর আকাশ-বাতাস।

সেদিন শেরেবাংলানগরে জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উত্সর্গ করতে চাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। তিনি দীর্ঘ চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বহুবার হামলার শিকার হয়েছেন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর সহযোদ্ধারা জীবন দিয়েছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, কিন্তু থেমে যাননি তিনি। চারবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রত্যাবর্তন দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি-

আজ বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৬টায় তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চে খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।

সকাল ১০টায় রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সীমিত পরিসরে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন। বিকেল ৩টায় গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সীমিত পরিসরে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।