বাজেটে বাড়ছে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৫-১৭ ১৬:৪২:০৪


সাধারণ জনগণের বিনিয়োগে আস্থার জায়গা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। যদিও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ যত বেশি হয় সরকারের ব্যয় তত বেশি বৃদ্ধি পায়। তারপরও করোনা মহামারিতে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কথা বিবেচনায় রেখে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।

আগামী ৩ জুন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে মুনাফার হার বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ওই আলোচনায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও করের আওতা বাড়ানোসহ বেশকিছু বিষয় গুরুত্ব পায়। সেখানে করের হার বৃদ্ধি না করে করের আওতা কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়। অন্যদিকে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা বিবেচনায় নিয়ে এই খাতে মুনাফা কিছুটা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। তাই বাজেট প্রস্তাবনায় সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কিছুটা বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের।

সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার সর্বোচ্চ রয়েছে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। যা প্রস্তাবিত বাজেটে স্তরভেদে ১২ থেকে ১২.৫০ শতাংশ হতে পারে বলে জানা গেছে।

জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পর বিনিয়োগ করা অর্থও ফেরত দেওয়া হয়। বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল। যা ২০১৫ সালের ২৩ মের পর কার্যকর হয়। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

অন্যদিকে ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকার জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা কমিয়ে দেয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ সীমা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

আসছে বাজেট বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এক শ্রেণির মানুষের উপকার হলেও এতে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে ব্যাংকিংখাতসহ অভ্যন্তরীণ আর্থিক খাতের ওপর চাপ আরও বাড়বে।

এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সব মিলিয়ে ৭৫ হাজার ১০৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময়ে মোট ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। তার আগের অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৩৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি।

আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য হতে পারে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। বাজেটের ঘাটতি অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে মেটানো হবে। আর ব্যয়ের বড় অংশ থাকবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, অবকাঠামো উন্নয়নে।

সানবিডি/এএ