৯ মাসে ৮৬ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির নতুন রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৫-১৯ ১৮:৪৬:৫৯


বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে মানুষের আয় কমলেও বেড়েছে সঞ্চয় প্রবণতা। এ সময়ের মধ্যেও গ্রাহকরা সঞ্চয়ের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান হিসেবে বিবেচনা করেছেন সঞ্চয়পত্রকে। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে সরকারের ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুন-মার্চ) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ৯ মাসে এত বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। একক মাস হিসেবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে মার্চ মাসে। এ মাসেই বিক্রি হয়েছে দশ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে বেশি ‘নিরাপদ’ মনে করছেন। তাই বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করেও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জুন থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে, মার্চে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ৬ হাজার ৮৭১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের ত‌থ্যে জানা গে‌ছে, চলতি ২০২০-২১ পু‌রো অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নে‌বে ব‌লে লক্ষ্য ঠিক ক‌রে সরকার। কিন্তু প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এ খাত থেকে সরকারকে দুই হাজার ২৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল।

জাতীয় বাজেটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে অন্যতম সঞ্চয়পত্র। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ২৭ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র যত বিক্রি হয় সরকারের ঋণও এই খাত থেকে তত বাড়ে। কারণ বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর প্রতি মাসে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি বলা হয়। অর্থনীতির পরিভাষায় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসেবে ধরা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, করোনা মহামারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমবে। সেই সঙ্গে এই খাত থেকে সরকারের ঋণের বোঝাও কমে আসবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। ব্যাংকগুলোতে আমানতের বিপরীতে সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকে টাকা রাখার বদলে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে মানুষ। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আগামী অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

সানবিডি/এএ