১৩৮ অবৈধ নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ তদন্ত কমিটির
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-০৫-২৪ ১৮:৪৪:৪২
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের শেষ কর্মদিবসে দেওয়া ১৩৮ জনের নিয়োগকে সম্পূর্ণ অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় আইন, প্রচলিত বিধি-বিধান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেওয়া ওই নিয়োগ পুরোপুরি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক উপাচার্যসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আব্দুস সোবহানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কাছে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আমাদের সুপারিশ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
তদন্ত কমিটি মোট ৯ দফা সুপারিশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এভাবে ১৩৮ জনকে নিয়োগ দিয়ে সাবেক উপাচার্য স্পষ্টতই আইন ও প্রশাসনিক রীতি-নীতি ভেঙেছেন। এ নিয়োগ দিতে গিয়ে তিনি অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি নিয়োগপ্রাপ্তদের মাত্র ৯ জনের জীবনবৃত্তান্ত পেয়েছে কমিটি। নিয়োগের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করেছে তদন্তদল। কমিটির প্রতিবেদনে নিয়োগের ঘটনায় প্রধান দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ড. এম আব্দুস সোবহানকে।
এ ঘটনায় প্রধান সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিদায়ি উপাচার্যের জামাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রভাষক এ টি এম শাহেদ পারভেজকে। এ ছাড়া সংস্থাপন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, রেজিস্ট্রার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম ও পরিষদ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদকে সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি।
সাবেক উপাচার্যের আরেকটি দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়েছে বিধায় বিচারের আগেই পালিয়ে যেতে পারেন এমন আশঙ্কায় তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া এত বড় অবৈধ নিয়োগ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুই উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কেবল শেষ দিনে গণনিয়োগ পাওয়া ১৩৮ জন নয়, স্বজনপ্রীতি ও যোগ্যতা কমিয়ে নিয়োগ পাওয়া আরো ৩৪ জন শিক্ষকের নিয়োগও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে এম সোবহানের দেওয়া ১৩৮ জনের অবৈধ নিয়োগের সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই শিক্ষকদের স্ত্রী, সন্তান, জামাতাসহ নিকটাত্মীয় অনেকে অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ জন্য অবৈধ এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদেরও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
গত ৬ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য আব্দুস সোবহান তাঁর শেষ কর্মদিবসে অ্যাডহকভিত্তিতে এই গণনিয়োগ দিয়ে যান। ৬ মে নিয়োগ দেওয়া হলেও এর এক দিন আগে ৫ মে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়। এই নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ওঠে। ঘটনা তদন্তে সেদিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয় চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন জমা দিল।
সানবিডি/এএ