কর অব্যাহতি পাবে শরিয়াহভিত্তিক বন্ড সুকুক-এর মুনাফা

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৫-৩০ ২১:২৭:১১


ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক বন্ড ‘সুকুক’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এজন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এ ‘সুকুক’ সম্পর্কে জনসাধারণকে আকৃষ্ট করতে এর মুনাফায় কর অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এর আগে এ বিষয়ে গত ৪ মার্চ রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজেটে সুকুককে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ হিসেবেই কর অব্যাহতি থাকছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। সরকার সুকুকের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে।

ইতোমধ্যে এ বন্ডে বিনিয়োগও শুরু হয়েছে। মোট ৪ হাজার কোটি টাকা করে দুই দফায় ৮ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড নামে সার্টিফিকেট বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎস কর দিতে হয় না। এত দিন ভিন্ন ছিল সুকুক। এ বন্ডে ৫ শতাংশ উৎসে কর চালু আছে।

দেশে প্রথমবারের মতো গত ২৮ ডিসেম্বর সুকুক বন্ড ইস্যু করে সেন্ট্রাল ব্যাংক। বিনিয়োগকারীরা মূলধনের ওপর ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন। এ বন্ড থেকে বিনিয়োগকারিরা দুই বার মুনাফা পাবেন, আর মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। সুকুকের দ্বিতীয় ধাপের নিলাম হবে আগামী ২৮ জুন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুকুক প্রচলিত আছে। তার মধ্যে রয়েছে- মুদারাবা (মুনাফায় অংশীদারি), মুশারাকা (লাভ-লোকসান ভাগাভাগি), মুরাবাহা (লাভে বিক্রি), ইশতিসনা (পণ্য তৈরি), করজ হাসান (উত্তম ঋণ), সালাম (অগ্রিম ক্রয়) ও ইজারা (ভাড়া) সুকুক। মুসলিম দেশের পাশাপাশি অমুসলিম দেশেও সুকুক চালু রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- মালয়েশিয়া, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র।

‘সুকুক’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়ার আইনি দলিল। এখন সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস হয়েছে এ সুকুক।

ইসলামি বন্ড সুকুক কীভাবে চলবে

বিনিয়োগকারীদের টাকায় গড়ে উঠবে এই প্রকল্প। সরকার এই প্রকল্প ভাড়া নেবে। এই ভাড়ার টাকা থেকে মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। আর মেয়াদ শেষে পুরো প্রকল্প কিনে বিনিয়োগকারীদের মূল টাকা ফেরত দেবে সরকার। এভাবে প্রথম এ বন্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

প্রচলিত বন্ড ও সুকুক-এর পার্থক্য

ঋণদাতা ও ঋণগ্রহিতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিই হচ্ছে বন্ড। এতে ঋণের পরিমাণ, পরিশোধের সময় ও সুদের হার উল্লেখ থাকে। প্রচলিত বন্ডে সুদ, ফাটকা ইত্যাদি থাকায় তা শরিয়াহসম্মত নয়। আর সুকুক হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ সনদ, যাতে সম্পদের ওপর মালিকানা দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান।

কেন সুকুক জনপ্রিয় করতে চায় সরকার?

অবকাঠামো খাতে সরকারের বিনিয়োগ প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অত্যন্ত বেশি। যা বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আশা করা যায় না। এ কাজ করতে যে ঘাটতি অর্থায়ন করতে হয়, সরকার এতদিন তা করে আসছে প্রচলিত ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থা থেকে। অবশ্য গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে সুকুক-এর কার্যক্রম।

এর আগে সুকুক-এর মাধ্যমে অর্থায়নের জন্য ৬৮টি প্রকল্পের তালিকা তৈরি করেছিল অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের জন্য টাকা লাগবে ১২ হাজার কোটি। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার ৫টি, ৪০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার ১২টি এবং ২০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ৪৬টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়।

জানা গেছে, পুরো ব্যাংক ব্যবস্থায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অংশীদারিত্ব প্রায় ২৫ শতাংশ। অথচ সরকারের ঘাটতি অর্থায়নে দেশে শরিয়াহভিত্তিক কোনও উপকরণ নেই। ফলে একদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকতর নিরাপদ এ খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকছে, অন্যদিকে সরকার তার ঘাটতি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল ব্যবহার করতে পারছে না। ঘাটতি অর্থায়ন সুকুক-এর মাধ্যমে করা হলে সরকারের সুদের ব্যয়ও কমবে।

সানবিডি/এএ