মন্ত্রিসভায় ৪ আইন ১ চুক্তির নীতিগত অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২১-০৫-৩১ ২০:৪১:৫৪


‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন,২০২১’সহ ৪ আইন ১ চুক্তির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অনুমোদন পাওয়া অন্য আইন এবং চুক্তি হলো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশলের খসড়া, বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা আইন এবং বতসওয়ানার সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি।

সোমবার (৩১ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা বৈঠকে অংশ নেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খসড়াটি উপস্থাপন করে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ‌্য জানান।

ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন

‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৩ সালের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউক্যাল অ্যাক্ট ছিল। সেটাকে পরিবর্তন করে এই আইন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ওই আইনে পরিচালিত হচ্ছিল।’

‘খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্স কোম্পানি লাইসেন্স ছাড়া বাংলাদেশে কোনো অর্থায়ন ও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে আকর্ষণ করতে ১৫/১৬ শতাংশ সুদ দেয়ার ঘোষণা দেয়। যুবকের কথা নিশ্চয় মনে আছে। সেখানে অনেকে সর্বস্ব হারায়। ক্যাপ করে দেয়া যায় কি না। সর্বোচ্চ এত টাকা জমা রাখতে পারবে। সুদের হারও নির্ধারণ করে দেয়া যায় কি না। যেন মানুষ বুঝেশুনে টাকা বিনিয়োগ করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারা কারা ঋণখেলাপী হতে পারবে তা বলে দেয়া হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলাজনিত কারণে বা কারো সাথে যোগসূত্র করে যেভাবেই হোক, সেসব বলে দেয়া হয়েছে খসড়া আইনে।’

‘আগের আইন অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠানগুলো আগে ইনস্টিটিউট হিসেবে বিবেচিত হতো এখন তারা কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে, এজন্য নতুন করে সেগুলোকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়েও কোনো পরিবর্তন আনতে হবে না।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি কেউ দেউলিয়া হয়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে গ্রাহকদের পাওনা বুঝিয়ে দেবে- সেজন্য বাংলাদেশে ব্যাংকে ডিপোজিটের ব্যবস্থা থাকবে। দেউলিয়া করার বিষয়টি বর্তমান আইন অনুযায়ী হাইকোর্টে যেতে হয়। মন্ত্রিসভা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে কোর্টের বাইরে এটি ফয়সালা করা যায় কি না। অনেক সময় বা ভোগান্তি কমে যাবে। কোর্টে গেলে দীর্ঘদিন মামলা চলবে, এরপর হাইকোর্টে যেতে হয়, আপিল বিভাগে গেলে আবার রিভিউ করতে হবে। এটা হলে একটা যুগান্তকারী দিক হবে। যদি দেউলিয়ার বিষয়টি কোর্টের বাইরে বাংলাদেশ বা অন্য কারো মাধ্যমে যদি এটি সলভ করা যায়, যারা খসড়া দেখবেন তারা বিষয়টি দেখবেন।’

খসড়া আইন অনুযায়ী, নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর নানান অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। পাশাপাশি ফৌজদারি আইনেও বিচার চলবে। সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত জেল হবে বলেও জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন অনুমোদন

‘বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২১’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশকে বদলে নতুন আইন করা হচ্ছে। তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

ভিসা অব্যাহতি চুক্তি হচ্ছে বতসওয়ানার সঙ্গে

বাংলাদেশে ও বতসওয়ানার মধ্যে একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বতসওয়ানার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং সরকারি পাসপোর্টধারীরা যাতে ভিসা ছাড়া যেতে পারে সেই চুক্তি হচ্ছে।

জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশলের খসড়া অনুমোদন

জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০১৪ সালে অ্যালায়েন্স ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের আমরা সম্মুখসারির সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছি। ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে খসড়া করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘রূপকল্প ২০২১ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যে আসছে তার একটা মডেল হিসেবে জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে আর্থিক সেবাপ্রদানকারী ব্যাংক ও অ-ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা ও ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবাপ্রদানকারী এজেন্সিসহ যত প্রতিষ্ঠান আছে তারা প্রযুক্তি নির্ভর গ্রাহক সেবাপ্রদান করে আর্থিক কার্যক্রম চালিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মূল কথাটা আমাদের অনানুষ্ঠানিক যে ফান্ডগুলো আছে সেটাকে ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসা। এজন্য কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে।’

বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা আইন চূড়ান্ত অনুমোদন

একই সঙ্গে ‘বিরোধীদলীয় নেতা একং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সামরিক শাসনের আমলে এই আইন হওয়ায় নতুন করে সেটাকে বদলে নতুন আইন করা হচ্ছে। খসড়ায় তেমন কোন পরিবর্তন আনা হয়নি বলেও জানিয়েছেন খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সানবিডি/এএ