সব বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করে শর্ত ভেঙেছে অপারেটররাঃ তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২১-১০-০৩ ১৬:৩৭:৩৩
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিবিসি-সিএনএনসহ ১৭টি বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে ‘ক্লিন ফিড’ পাঠানো সত্ত্বেও সেগুলো বন্ধ রেখে শর্ত ভঙ্গ করেছেন ক্যাবল অপারেটররা। তারা শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
তবে ক্যাবল অপারেটররা বলছেন, যে চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড দেয় সরকার সেগুলোর তালিকা সরবরাহ করলে তারা সেগুলো সম্প্রচার করবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা, এনএইচকে, ফ্রান্স টিভি, রাশিয়ান টিভি, ইউরো টিভি এবং অ্যানিমেল প্ল্যানেট- এই ধরনের ১৭টি বা তার বেশি টিভি চ্যানেলে ক্লিন ফিড আসে। কিন্তু সেগুলো অনেকে চালাচ্ছেন না। যেটা ক্যাবল অপারেটর লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে সেই শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, যেসব চ্যানেল ক্লিন ফিড পাঠায় না, তাদের এখানে এজেন্ট আছে। এই দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট চ্যানেল এবং এজেন্টের।
তিনি বলেন, ক্যাবল অপারেটরের যে পুরোপুরি দায়িত্ব তা নয়। কিন্তু কোনো কোনো ক্যাবল অপারেটর এজেন্টদের পাশ কাটিয়ে স্যাটেলাইট থেকে পাইরেসি করে ডাউনলিংক করে। এজেন্ট ডাউনলিংকের অনুমোদনপ্রাপ্ত। কিন্তু কোনো ক্যাবল অপারেটর যদি পারমিশন না থাকে তাহলে ডাউনলিংক করতে পারবে না। তারা যেটা করে সেটা পাইরেসি এবং আইনবর্হিভূত।
ক্যাবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াব-এর একাংশ যে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে, সেটাকেও ‘আইন বহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী।
শনিবার (২ অক্টোবর) ক্যাবল অপারেটরস সমন্বয় কমিটি নামে কোয়াব-এর একটা অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মোশারফ আলী, চার দফা দাবি জানিয়ে একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন। সেখানে বলা হয়, ৪ অক্টোবরের মধ্যে ক্যাবল টিভি নিয়ে জটিলতার অবসান না হলে সমগ্র বাংলাদেশের ক্যাবল অপারেটরদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তারা।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব চ্যানেল দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে এবং সংস্কৃতিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে সেগুলোর পক্ষে ওকালতি করা দেশের স্বার্থবিরোধী, আইন বিরোধী। আমি আশা করবো কেউ দেশের স্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হবেন না।
সরকার কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না, উল্লেখ করে হাসান মাহমুদ বলেন, তবে সমস্যা সমাধানে আলোচনার পথ খোলা আছে।
ক্যাবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াব-এর নেতা আনোয়ার পারভেজ জানান, সরকার যদি ক্লিন ফিড দেয় এমন চ্যানেলের একটি তালিকা দেয় তাহলে তারা সেগুলো চালু রাখবে।
তিনি বলেন, একটা বিদেশি চ্যানেলে হঠাৎ করে একটা হোটেলের বিজ্ঞাপন যদি দেখায় বা এয়ারলাইন্সের বিজ্ঞাপন দেখায় এবং সেই মুহূর্তে যদি মোবাইল কোর্ট আসে, তাহলে তো সব দায় আমার নিতে হবে। তাই ভালো হয় সরকার যদি আমাদের একটা তালিকা দেয় তাহলে আমরা নিশ্চিন্তে ওই চ্যানেলগুলো চালাতে পারি।
কোয়াব বলছে, এই জটিলতা কাটানোর জন্য যখন সরকার আমাদের আলোচনার জন্য ডাকবে তখনি আমরা আলোচনা করার জন্য প্রস্তুত আছি।
আন্দোলনের হুমকি প্রসংগে আনোয়ার পারভেজ বলেন, অপারেটরদের অ্যাসোসিয়েশনের একাংশের এই ঘোষণার সংগে মূল অংশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এদিকে ক্যাবল অপারেটরস সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মোশারফ আলী’র সংগে এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা তাদের দাবি নিয়ে রবিবারই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগে বৈঠক করেছেন। তারা মন্ত্রী বরাবর একটি চিঠিও লিখেছেন।
তিনি বলেন, ক্লিন ফিডের বিষয়টা ব্রডকাস্টার এবং লোকাল ডিস্ট্রিবিউটরদের উপর নির্ভর করে। ক্লিন ফিড আনার বিষয়টাতে সময় লাগবে। আমারা চিঠিতে সময় চেয়েছি। বলেছি তার আগে সব চ্যানেল উন্মুক্ত করে দিতে।
বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনহীন সম্প্রচার চালানোর জন্য সরকার নির্দেশ দেওয়ার পর শুক্রবার (১ অক্টোবর) থেকে বাংলাদেশে সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে ক্যাবল অপারেটররা। এর ফলে সরকার এবং ক্যাবল অপারেটররা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। দর্শকরা তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এএ